রংপুরে পিডিবির শত কোটি টাকার মালামাল ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি

রংপুর, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-31 13:07:29

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) রংপুর ডিভিশন-৩ অফিস থেকে কোনো প্রকার টেন্ডার (দরপত্র আহ্বান) ছাড়াই প্রায় একশত কোটি টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল মাত্র ১৭ লাখ টাকায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিডিবির রংপুর ডিভিশনের প্রধান প্রকৌশলী। তার দাবি, দরপত্র আহ্বান করা না হলেও সাতজনের একটি কমিটি করে এসব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর খামারস্থ পিডিবি ডিভিশন-৩ অফিসে গিয়ে জানা যায়, গত দুই দিনে ৩০-৩৫টি ট্রান্সফরমারসহ বেশ কিছু মূল্যবান বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও মালামাল রাতের আঁধারে ট্রাকে করে অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব মালামালের আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা হবে বলে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা।

নাম না প্রকাশে শর্তে একজন কর্মচারী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সোমবার দিনভর ট্রাক লোড করে কোনো ধরনের পরিমাপ ছাড়াই ট্রান্সফরমারসহ বেশি কিছু মালামাল বাইরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই এসব মালামাল পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। পিডিবি ডিভিশন-৩ থেকে যে সব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে এসবের আনুমানিক একশত কোটি টাকা হবে। অথচ মালামাল টেন্ডার ছাড়াই মাত্র ১৬ লাখ ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

এটি নতুন কোন ঘটনা নয় বলেও দাবি করেন ওই কর্মচারী।

পিডিবি ডিভিশন-৩ অফিস সংলগ্ন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে পিডিবিতে এমন অনিয়ম চলেই আসছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব দুর্নীতি-অনিয়ম করছে। রাতের আঁধারে এখান থেকে অনেক সময় মালামালবাহী ট্রাক বের হয়। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলে দুর্নীতি ও অনিয়মের কিছুটা হলেও প্রমাণ মিলবে। এখন টেন্ডার ছাড়া মালামাল বিক্রির বিষয়টি সবাই জানতে পারায় অফিসের বড় অফিসাররা নিজেদের দোষ লুকোনোর চেষ্টা করছেন।’

এদিকে, মালামালবাহী একজন শ্রমিক ও ট্রাক চালক বলেন, ‘আমরাতো জানি এসব মালামাল তিন কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখান থেকে মালামাল লোড করে নিয়ে অন্যত্র গিয়ে ওজন পরিমাপ করে।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন সরকার বলেন, ‘মালামাল বিক্রির জন্য কোনো ধরনের টেন্ডার দেয়া হয়নি তবে উপরের নির্দেশে কোটেশন দিয়ে এসব বিক্রি করা হয়েছে। হেড অফিস থেকে সেভাবেই নির্দেশ দেয়া আছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সেনা কল্যাণ সংস্থাকে মালামালগুলো দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, অডিট বিভাগের ডিজিএম, একাউন্ট অফিসের ডিডি, চীফ অফিসের ম্যানেজার, এমডি অফিসের সহকারী ম্যানেজার, স্টোর ম্যানেজারসহ ৭ সদস্যের একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। তারাই এসব মালামাল বিক্রি করেছে।’

এ বিষয়ে কোনো ধরনের লিখিত অফিস অর্ডার দেখাতে পারেননি তিনি। বরং সাংবাদিকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় কাগজপত্র আগামী সপ্তাহে দেখানোর কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে তিনি দ্রুত সটকে পড়েন।

ঠিকাদার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেনা কল্যাণ সংস্থার পক্ষে আমি মালামালগুলো কেরিং করে নিয়ে যাচ্ছি। কি প্রক্রিয়ায় মালামালগুলো বিক্রি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে পিডিবির ইঞ্জিনিয়াররা ভালো বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে পিডিবির রংপুর ডিভিশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম মন্ডল মালামাল বিক্রির বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তারা জানান, কে বা কারা এসব মালামাল কত দামে বিক্রি করেছে তা আমাদের জানা নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর