৪৮ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারগুলো

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) | 2023-08-26 22:23:34

আজ ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবস। স্বাধীনতার পর কেটে গেছে ৪৮ বছর। সুদীর্ঘ এ সময়ে সরকারের পালা বদল হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় শহীদ হওয়া ১৪ পরিবার আজও স্বীকৃতি পায়নি। সেদিন শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় ১ জন মুসলমান ও ১৩ জন হিন্দু শহীদ হয়। পাকবাহিনীর ভয়ে হিন্দু শহীদ পরিবারের মৃতদেহ সৎকার করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে রাখে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এসব স্মৃতিচিহ্ন। শহীদ পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ তাদের খোঁজ নেয় না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

 

শহীদ মধু সূদন ধরের ছেলে সুপ্রিয় ধর বাচ্চু জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও স্বজন হারানো পরিবারগুলো শহীদ পরিবারের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পাননি। ২০১১ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকির শালীহর বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। কিন্তু সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করায় বধ্যভূমিটি গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

 

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সদস্য এইচ এম খায়রুল বাসার বলেন, জেলা পরিষদের অর্থায়নে আমরা গত বছর বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ সংস্কার করে শহীদদের নামফলক স্থাপন করেছি। আগামী অর্থবছরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ মে  মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মধুসূদন ধরকে শালীহর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। এরপর তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট পাক বাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে। এরপর বিসকার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিন এবং আল বদর কমান্ডার আব্দুল মান্নান ফকিরের নেতৃত্বে উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তাণ্ডব চালায় পাকবাহিনী। গুলির মুখ থেকে কলেমা পাঠ করে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান নগেন্দ্র চৌকিদার। তবে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ আলী বেপারীকে। এরপর দীর্ঘ ৪৮ বছরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেদিন গ্রামে ঢুকেই পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে একে হত্যা করে মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাসকে।

 

শহীদ পরিবারের সদস্য গীরিবালা বলেন, পাঞ্জাবিরা আমার শ্বশুর কামিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকা শ্বশুর তারিনীকান্ত বিশ্বাস, কাকী শাশুড়ি কিরদা সুন্দরীকে চোখের সামনে গুলি হত্যা করে। কিন্তু আমার স্বামী জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে ঘুরে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়নি। কার্ড পায়নি আমার চাচী শাশুড়ি শহীদ কিরদা সুন্দরীর ছেলে অনিল কান্ত বিশ্বাসও।

শহীদ জ্ঞানেন্দ্র করের ছেলের বউ শীবানী কর বলেন, আমরা মাটির ঘরে থাকি। বাড়িতে নলকূপ ও শৌচাগার না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের লোকজন আমাদের কোনো খবর নেয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফারহানা করিম বলেন, মানবেতর জীবনযাপন করা শহীদ পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর