রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করতে চায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় বাংলাদেশে প্রায় দশ লাখেরও রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তাই ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে এ তদন্ত করতে বাংলাদেশের সম্মতি চেয়েছে আইসিসি।
গত ৭ মে আইসিসির প্রাক-বিচারিক শুনানিতে তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে অভিমত চাওয়া হয় । বাংলাদেশকে আগামী ১১ জুনের মধ্যে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে অভিমত পাঠাতে হবে বলে আইসিসি জানিয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না। তারা আরও অপেক্ষা করতে চায়। মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে চায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। এর আওতায় দুই দেশের কমিটি গঠন হয়েছে। এরই মধ্যে দুই দেশ একাধিক বৈঠকে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের নিকট হস্তান্তর করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, এর মধ্যে থেকে দুই হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা মিয়ানমার নিতে সম্মত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। ঠিক এ সময় আইসিসিতে যাওয়া ঠিক হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। ভাল-মন্দে তাদের সঙ্গেই আমাদের থাকতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার অসহযোগিতা করাতে প্রথম দিকে আইসিসিতে যেতে চেয়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এ প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই বাংলাদেশ কিছুটা হলেও ধীর ও স্থির পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে। এ সকল বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নিতে বলেছেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রগুলো চাচ্ছে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তোলার আগে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এর সমাধান করা হোক। বিশেষ করে ভারত, চীন ও জাপানের এমনই মনোভাব।
ভারত ইতিমধ্যে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের আবাসন তৈরীতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হলেই মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাবেক কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বার্তা২৪.কমকে এ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এখনই এ বিষয়ে সম্মতি দেওয়া ডিফিকাল্ট। বাংলাদেশ চায় সম্মতি দিতে, কিন্তু প্রেকটিক্যালি কিছু সমস্যা আছে। আমরা তাদের আইসিসিতে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, সেই ধরনের সমস্যা আমাদের আগেও হয়েছে, সামনেও হতে পারে। সে জন্য আমাদের রিজার্ভেশন থাকতে পারে। আমি যেটি মনে করি এবং বলতে পারি যে বাংলাদেশ এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে যারা এ ধরণের অপরাধ করেছিল, তাদের আমরা বিচারের আওতায় এনেছি। অন্য দেশেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড হয়ে থাকলে আমরা এর বিচার চাই।