রাস্তায় চামড়া, দেখতেও আসছে না ব্যাপারীরা

ঢাকা, জাতীয়

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 00:00:39

দাম কম থাকায় সারি সারি স্তূপ চামড়া নিয়ে রাস্তায় ব্যবসায়ীদের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন চামড়া মালিকরা। কিন্তু মৌসুমি, কিংবা বড় ব্যবসায়ীরা কোনো খোঁজ খবরও নিচ্ছেন না।

ফলে সকাল থেকে কুড়িয়ে এনে জমা করে রাখা চামড়া নিয়ে ভয়াবহ বিপদে পড়েছে রাজধানীর মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা এবং বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো।

সোমবার (১২ আগস্ট) রাতে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার এবং মালিবাগ এলাকার ঘুরে দেখা গেছে- ছোট, বড়, গরু এবং ছাগলের চামড়া ভাগ করে কয়েক স্তরে রাখা হয়েছে। চামড়ার স্তূপ সামনে রেখে পাহারা নিচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুন:  কাঁচা চামড়ার পাইকারি দামে লোকসানের শঙ্কা খুচরা ব্যবসায়ীদের

শুধু তাই নয়, তাদের পরিচিত ব্যবসায়ীদের ফোন করছেন। ব্যবসায়ীরা তোদেরকে ফোনে বলছেন, 'চামড়ার দাম নেই, পোস্তা ট্যানারি মালিকরা কিনছে না। আমরা কিনে লোকসান বাড়াতে পারব না'।

ওয়ারলেস গেইট এলাকায় অবস্থিত হোসানিয়া মাদরাসার শিক্ষক আওলাদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এবার গরিবকে একেবারে মেরে ফেলছে। চামড়া তো গরিবের হক, কয়েকটি একটি সিন্ডিকেট মিলে চামড়া কিনছে না। তাদের নির্দেশে এবার কোনো ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে আসছে না।'

আরও পড়ুন: রংপুরে চামড়ার সরবরাহ কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা

চামড়া পাচার রোধে বেনাপোল সীমান্তে সতর্কতা

রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহাখালীর রাস্তার উপর শত শত চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীর অপেক্ষা করছিলেন শাহ খেরিয়া মসজিদ ও এতিম খানার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তারেকুজ্জামান। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'গত ৩০ বছর জীবনে চামড়ার এমন কম দাম দেখিনি'।

তিনি বলেন, 'গত বছরও চামড়া কেনার জন্য সন্ধ্যা থেকে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী ফোন নিয়েছিলো। এবার কেউ আসছে না। চামড়ার কথা জিজ্ঞাসাও করছে না।'

রাজারবাগ এলাকায় রাস্তার উপর চামড়া নিয়ে বসে থাকা, এতিম খানার শিক্ষক মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, 'বিভিন্ন এলাকার গরু জবাই করে দেওয়ার বিনিময়ে পশুর চামড়াগুলো দিয়েছেন। এই চামড়াগুলো বিক্রি করে এখানকার এতিম শিশুদের খাবারের টাকা জোগানো হয়। অথচ এই দামড়ার দামই বলেছে না।' গরিবের পেটে লাথি মারা ছাড়া আর কী প্রশ্ন করেন তিনি।

এদিকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত দেখা গেছে, গত বছরও যে চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছিলেন, এ বছর সেই চামড়া কিনছেন ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'পানির দরে চামড়া কিনছেন বড় (পোস্তা ও ট্যানারি) ব্যবসায়ীরা।'

সরকার নির্ধারিত দামে ভাল মানের ছোট একটি গরুর চামড়ায় দাম কমেছে এক থেকে দেড়শ টাকা। মাঝারি মানের গরুর চামড়ার দাম কমেছে অর্ধেক। একইভাবে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে কিনছেন। ছাগল কিংবা ভেড়ার চামড়ার দাম একেবারেই কম।

রাজধানীর হাজারীবাগ, মতিঝিল, সায়েন্স ল্যাব, পোস্তা এলাকায় ছোট গরু অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকার নিচের দামের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় কিনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

মাঝারি গরু অর্থাৎ লাখ টাকার নিচের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। গত বছর একই চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে এসব চামড়া বিক্রি হওয়ার কথা ছিল অন্তত হাজার টাকা।

আরও পড়ুন:  ‘পানির’ দরে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা

এসব এলাকায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়াও পাঁচ লাখের বেশি দামের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকার ওপরে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারি ও পোস্তার আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম বলে তারা চুপ করে বসে আছেন। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করতে না পারলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী, ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুট চামড়া লবণ দেওয়ার পরে ৯০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু সোমবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। কোথাও কোথাও আরও কম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর