কেন থামছে না অবৈধ আইফোনের স্রোত?

, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-12-12 20:38:40

ঢাকা: স্মার্টফোন জগতে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় হ্যান্ডসেট তালিকার সবার উপরে আইফোনের অবস্থান। ক্রেতাদের চাহিদাকে সামনে রেখে বিশ্বের স্বনামধন্য গেজেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল’ এখন পর্যন্ত আইফোনের ১৮ টি সংস্করণ বাজারে এনেছে।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ ফোনটির চাহিদা ব্যাপক। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশি দামের কারণে অধিকাংশ ক্রেতার হাতের নাগালের বাইরে রয়ে যায় ফোনটি।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক দামের তুলনায় ৩০-৪০ হাজার টাকা কমে আইফোন বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দিয়ে আইফোন দেশে আনছেন বলেই এই কমমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দারা বিভিন্ন সময় রাজধানীর নানা মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ সব অবৈধ আইফোন জব্দ করছেন। সর্বশেষ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম ১৫০ টির মতো অবৈধ আইফোন জব্দ করা হয়েছে।

তবে শুল্ক গোয়েন্দাদের অবৈধ আইফোন জব্দের অভিযান রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতেই সীমাবদ্ধ। বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কায়দায় কর ফাঁকি দিয়ে আসা আইফোন জব্দের তেমন কোনো নজির নেই।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র মতে, প্রতিদিন শুধুমাত্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে ৫০-১০০ টি আইফোন হ্যান্ডসেট কর ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকছে। এছাড়া আরেকটি তথ্য মতে, গত দুই মাসে ৭০০ টির মতো আইফোন কর ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকেছে বলেও জানা যায়।

দেশের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে জব্দ হলেও বিমানবন্দরে আসা এসব অবৈধ আইফোন না আটকানোর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও মোবাইল ব্যবসায়ীরা।

কয়েকজন মোবাইল ফোন বিক্রেতা ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুইভাবে এসব আইফোন হ্যান্ডসেট দেশে আসছে।

 

এর মধ্যে সাধারণ যাত্রীরা নিজে বা পরিবারের ব্যবহারের কথা বলে কিছু আইফোন কর ছাড়া নিয়ে আসেন। পরে তারা এগুলো নিজেরা ব্যবহার না করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। যদিও আইন অনুযায়ী নিজের জন্য বিদেশ থেকে পণ্যে এনে সেটি বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, এতে সরকার রাজস্ব হারায়।

এ বিষয়ে বসুন্ধরা শপিংমলের স্মার্টফোন ক্যাফের মালিক মাকসুদ আজেম বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিজের ব্যবহারের কথা বলে বিদেশ থেকে আনা আইফোন ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে বিক্রি করছেন। তাই ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক দাম থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা কমে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। আর এতে বৈধ স্মার্টফোন ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

তবে কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে তৈরি চক্রটির মাধ্যমেই সব থেকে বেশি অবৈধ আইফোন দেশে আসছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্রে মধ্যমে জানা যায়।

চক্রটি হংকং, সিঙ্গাপুর ,মালয়েশিয়া, দুবাই ও চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আইফোন দেশে আনছেন। চক্রটি প্রতি আইফোনের জন্য ব্যবসায়ীদের ২-৩ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন। পরে বিমানবন্দরে কাস্টমস অফিসারদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে এসব আইফোন দেশের বাজারে ঢুকছে। ফলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ অবৈধ আইফোন দেশে নিয়ে আসছেন। জনবল কম থাকায় ও নিয়মের কারণে সকল যাত্রীকে তল্লাশী করা সম্ভব হয় না। এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কয়েকটি চক্র যোগসাজশ করে চোরাই আইফোনের ব্যবসা চালাচ্ছেন।

আমরা সতর্ক থাকার পরো বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে পারছি না। তবে ব্যবস্থা নিচ্ছি ও অভিযানও চলবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর