জেলে পাড়ায় চলছে উৎসবের আমেজ

ঢাকা, জাতীয়

রকিব কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, চট্টগ্রাম | 2023-09-01 23:08:46

কয়েকদিন আগেও জেলে পাড়ার মানুষগুলোর চোখে-মুখে দেখা মিলত নীরব আর্তনাদ। এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে অলস মুখগুলো চেয়ে থাকত সাগর পানে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকালের সূর্যটা তাদের কাছে ধরা দেয় নতুন রূপে। সাগরে মাছ ধরার দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার অবসান হবে আজ রাত থেকে। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলা পাড়ার ঘরে ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আবারও নতুন জালে ধরা দিবে সাগরের মাছ, বাজারে শুরু হবে হাঁকডাক। কষ্টের লাঘাব হবে, ছেলে মেয়েদের দু‘মুঠো অন্নের ব্যবস্থা হবে। এমন প্রত্যাশায় দিন পার করছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকালে নগরের ফিরিঙ্গীবাজারে দেখা যায়, জেলেরা মাছ রাখার ড্রামগুলো পরিষ্কার করে নিচ্ছেন, কেউ নতুন জাল বুনছেন, কেউ বুনন করা নতুন জালগুলো সারিবদ্ধ আকারে নৌকায় তুলছেন। রাতের আঁধারে মাছ ধরার জন্য কুপিতে তেল ভরে নিচ্ছেন। অনেকে মাছ রাখার জন্য ছোট ঝুপড়ি তৈরি করছেন। সব মিলিয়ে মাছ ধরার আনন্দে জেলে পাড়ার মানুষগুলো চোখে মুখে উচ্ছ্বাস আর আনন্দের ঝিলিক দেখা যায়। এ সময় কথা হয় বেশ কয়েকজন জেলা ও ট্রলার মালিকের সঙ্গে।

নগরের ফিরিঙ্গীবাজারের ট্রলার মালিক নুরুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, তিন/চার দিন আগে থেকে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি শুরু করেছে। এটা ছাড়া তাদের আর কোনো পেশা নেই। মাছ ধরায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি না হলেও জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও জানান, তার ছোট বড় ৫০০ নৌকা আছে। নৌকা পাশাপাশি ট্রলারের সহায়তায় মাছ আহরণ করা হবে। মাছ বেশি ধরা পড়লে চাহিদায় পূরণ করা সহজ হবে।

অপরদিকে কর্ণফুলীর নদীর পাড়ে দেখা গেলো মিলল ১০ থেকে ১২ জন জেলে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মোহাম্মদ বাবুল নামে এক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মালিকদের নির্দেশে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১২, আবারও কোনটাতে ৭ থেকে ৮ জন জেলে রয়েছেন।

এ দিকে সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় স্বস্তি এসেছে কাঁচাবাজারেও। উপকূল থেকে সাগরে গভীরে মাছ ধরতে না পারায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয় মাছের বাজারে। ফলে মাছের দাম বেড়ে যায়। তবে কয়েক সপ্তাহ মাছ ধরলে আবারও দাম কমবে- জানান ব্যবসায়ীরা।

নগরের অভিজাত কাঁচাবাজার কাজীর দেউড়ির মাছ বিক্রেতা অলিউর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, সরবরাহ না থাকায় সামুদ্রিক মাছের দাম বেশি ছিল। যার প্রভাব ছিলো মিঠার পানি মাছের ওপর। এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে আশা করছি, মাছের দাম কমে আসবে, জেলারাও লাভবান হবে।

উল্লেখ্য, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরে বন্ধ ছিলো সামুদ্রিক মাছ ধরা। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান,  শ্রীলঙ্কা এমনকি চীনও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় এই সময়টাতে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সে আলোকে বাংলাদেশ সরকারও মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর