৪৮ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 08:14:21

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে রাজশাহী সার্কিট হাউজে অস্ত্র জমা দিতে আসেন বগুড়ার গাবতলীর মঞ্জুর চৌধুরী মঞ্জু (৬৬)। অস্ত্র জমা দিয়ে আর বগুড়ায় ফেরেননি। রাজশাহীতেই থেকে যান ১৮ বছর বয়সী মঞ্জুর। রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা এলাকায় রেললাইনের ধারে জামালপুর বস্তিতে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানেই থাকছেন তিনি।

জীবিকার তাগিদে ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ভাড়ায় রিকশা চালানো শুরু করেন তিনি। মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেতরে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে গত ৪৮ বছর ধরে রিকশা চালান মঞ্জুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কোণঠাসা হয়ে পড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের উত্থান সবই দেখেছেন নিজের চোখে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ভক্ত মঞ্জুর সুযোগ পেলেই রিকশা যাত্রীদের শোনান মুক্তিযুদ্ধের গল্প। শোনান বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়ার সাহসী গল্প। মুগ্ধ হয়ে শোনেন অনেকেই, আবার কেউ কেউ তার সার্টিফিকেটের কথাও জানতে চান।

কিন্তু মঞ্জুর বলেন, ‘সার্টিফিকেট নিতে তো আমি যুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার কাজ আমি করে খাব। রুটি-রুজির মালিক আল্লাহ। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে সম্মানিত মনে করি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকশা চালানোর সময় অনেক শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষকের দ্বারাও খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর। যা বলতে গিয়ে অনেক সময় কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘ভার্সিটির মধ্যে রিকশা চালাই। সবাই শিক্ষিত, কেউ খারাপ ব্যবহার করবে, এটা ভাবতেই পারি না। তবুও আজে-বাজে কথা ও ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়। যাতে খুব খারাপ লাগে। মাঝেমধ্যে চোখে পানি চলে আসে।’

এদিকে, ভদ্রা রেল লাইনের ধারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে যে ঘরে বসবাস করতেন মঞ্জুর, তা কিছুদিন আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে বাঁশের খুঁটিতে পলিথিন মুড়িয়ে ঘর বানিয়ে তাতে থাকছেন এই মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবার। তবে এ ব্যাপারে কারও প্রতি তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। কারও কাছে হাত পাততেও রাজি নন তিনি। রাষ্ট্রীয় কোনো সহায়তার জন্যও নেই তাঁর কোনো আকুতি।

মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর চাওয়া শুধু- দেশের মানুষ ভালো থাকুক। ভালো থাকুক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতাম রেডিওতে। রক্ত গরম হয়ে আসত। গ্রামের আরও কয়েক বন্ধু মিলে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ঐ ভাষণ এখনো কানে বাজে। এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশ চালাচ্ছেন, দেশের মানুষের উন্নতি হোক সেটা চাই।’

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ানোর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর চাচাকে চিনি। তিনি খুব ভালো মানুষ। তাঁর কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম। তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খুব ভালোবাসেন। তাঁর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি সবসময় দেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর