প্রাণের দুধে সাবান!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 21:49:22

প্রাণ, মিল্কভিটা, আড়ংসহ বাজারে বিক্রি হওয়া পাস্তুরিত সাতটি কোম্পানির দুধ-ই মানহীন বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার। গবেষকরা বলছেন, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের নমুনাতে ডিটারজেন্ট আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হয়। পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার তিনটিতে ও অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনার একটিতে ডিটারজেন্ট বা সাবান শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাণের দুধ অন্যতম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমার ধারণা, এই দুধগুলো নকল দুধ। আমাদের গোয়েন্দাদের এসব নিয়ে কাজ করা উচিৎ।’

এই গবেষক বলেন, ‘আমার ৪৫ বছরের ফার্মেসি নিয়ে পড়াশোনাকালে, আমি কখনো শুনিনি, দুধে সাবান মেশানো হয়। প্রাণ দুধে যা মিলেছে। দুধ তো পরিষ্কার করার কিছু নেই। ফেনা হওয়ারও কিছু নেই। তাহলে দুধে সাবান কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি, দুধে সাবান থাকবে। তাই নিশ্চিত হতে একাধিকবার পরীক্ষা করেছি আমরা।’

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

দুধে কিভাবে সাবান ব্যবহার করা হতে পারে- জানতে চাইলে অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘সাধারণত মেশিন অয়েল হলো সবচেয়ে কমদামী তেল। এর কোনো গন্ধ নেই। এই তেল পানির সঙ্গে মেশানো হয়, যদিও তেল আর জল এক সঙ্গে মিশে না। কিন্তু জোর করে মিশ্রিত করি। তারপর তাকে ইমালশন বানাই। ইমালশন হলো তেল আর জলের মিশ্রণ। আর এই মিশ্রণটি করার জন্য দুইটা জিনিস লাগে, একটা ডিটারজেন্ট আর একটি ইমাল্টিফাইন এজেন্ট। ঐ কোম্পানি নকল প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য কোনোভাবে এই বিজ্ঞানটি শিখে নিয়েছে।’

এই গবেষক আরও বলেন, ‘এই প্রক্তিয়ায় নকল দুধ বানানো সহজ। এতে খরচ যেমন কম হয়, তেমনি আসল দুধও প্রয়োজন হয় না।’

তিনি বলেন, ‘মেশিন অয়েল ডিটারজেন্ট দিয়ে গলিয়ে হোমোজিনাই নামক একটি মেশিন দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রিত করা হয়। খালি চোখে দুই এজেন্ট আলাদা করার সুযোগ থাকে না। রঙটাও আবার সাদা ঘন দুধের মতো। একটু ফ্লেবার মিশালেই দুধ হয়ে যায়।’

প্রাণের এই নকল দুধ খেলে কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে, মেশিন অয়েল খেলে মানুষ মারা যাবে না। তবে পাতলা পায়খানা হবে, বমি হবে, খেতে ইচ্ছে করবে না, বদহজম হবে।’

‘ঐ নকল দুধে যদি ডিটারজেন্ট বা সাবানের পরিমাণ বেশি থাকে। সেক্ষত্রে শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি হবে। আমরা ওষুধে সাবান ব্যবহার করি, সেগুলো গুণগত মান সম্পন্ন। কিন্তু নকল দুধে নিশ্চয় সেটা মানা হবে না। তাই এই দুধ খেলে লিভার, পাকস্থলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

নকল দুধের বিষয়ে প্রাণের কমিউনিকেশন ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এই গবেষণাপত্র আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।’

এদিকে বাজারে থাকা ১৪ ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কোনো কিছুই পায়নি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। আদালতে সংস্থাটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে এই সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় নানা সুবিধার বিনিময়ে পণ্যের মান ও গুণ সম্পর্কে অনুমোদন পাওয়া যায় বলে মনে করেন ঢাবির গবেষক দলের সদস্যরা।

অন্যদিকে, ভোক্তা অধিকার অধিদফতর বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের এই গবেষণাপত্র সম্পর্কে অবগত আছে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পণ্যের মানের দিক বিবেচনা করে বিএসটিআই। বিএসটিআই যদি কোনো পণ্য মানহীন বলে, অভিযান পরিচালনা করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর