‘রিকশাচালককে আপনি ও ড্রাইভারকে সাহেব বলা পারিবারিক শিক্ষা’

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 20:04:09

কোন কাজই যে ছোট নয়, বা মাঠে কায়িক পরিশ্রমের কাজ সামাজিক মর্যাদায় যে কোনোভাবেই খাটো হতে পারে না তা অনুধাবনের  আহবান জানিয়ে সরকারি নবীন কর্মচারিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন কাজ যে ছোট কাজ নয়, এই কথাটাও মানুষকে বোঝাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখলেই আমি ধান কাটতে পারবো না, এই যে মানসিকতা তা পরিহার করতে হবে। ধান কাটার লোক না পাওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি ছাত্রলীগকে নিজ নিজ এলাকায় ধান কাটায় নেমে যাওয়ার হুকুম দেন বলে জানান।

বঙ্গবন্ধু কন্যা সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে মর্যাদা দেওয়ার আহবান জানিয়ে  বলেন, ব্যক্তিজীবনে পিতা-মাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী রিকশাচালককে আপনি সম্বোধন করা, ড্রাইভারকে সাহেব বলে সম্বোধনের পারিবারিক শিক্ষা।

রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে ১১০, ১১১ ও ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন সরকারি কর্মচারিদের  উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাজটাকে কেবল চাকরি হিসেবে নিলে হবে না। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কর্মক্ষেত্রে দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং  উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ঘটিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের ভেতরে ইনোভেটিভ চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে। নিজের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। কোন কাজ পারবো, কি পারবো না এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভূগলে চলবে না। হ্যাঁ, আমি পারবো, সেই বিশ্বাসটা সব সময় নিজের ওপর রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা চাইতেন বাঙালিরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে তাই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং আমরা তা করতে পারবো। এই কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে, এই আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারিদের জনসেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাবার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমি এইটুকু অনুরোধ করবো-যে যেখানে যাবে কেবল চাকরির স্বার্থে চাকরি করা নয়, জনসেবা করা, দেশ সেবা করা, দেশকে ভালবাসা, মানুষকে ভালবাসা-এই কথাটা মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ-সুবিধা পাবে। এটাই হচ্ছে আমার গ্রাম আমার শহর।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগের সরকারের ৬১ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এবার আমার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছি এবং ১৯ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের জায়গায় ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অর্থ জনগণের অর্থ সেটা মনে রাখতে হবে। আজকে আমরা বেতন-ভাতা যা কিছুই পাচ্ছি তা আমাদের দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি জনতার ঘামে উপার্জিত অর্থ। কাজেই তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, তাঁদের উন্নতি করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় আজকের প্রজন্মই সে সময়ে অনেক উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হবে। কাজেই এখন থেকেই সে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের বিগত ১০ বছরের ধারবাহিক শাসনে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।

তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথনে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিষয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, ডলারের দাম এবং জাতীয় বাজেট সম্পর্কে জানতে চান এবং বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আজ বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই এখন একথাটি বলে যাচ্ছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কয়টি দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দক্ষিণ এশিয়ায় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর অপশাসন, দেশের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র, দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন করণীয়গুলো এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ঘুরে ফিরেই আসে।

শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের সময়ে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে আমাদের অনেক কর্মযজ্ঞ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, সমগ্র দেশকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ন্যাশনাল ই সার্ভিস সিষ্টেম চালু, ৫ হাজার ১০৮টি সরকারি দপ্তরে ই ফাইলিং কার্যক্রম চালু করেছে। ফলে, বিদেশে গেলে সেখান থেকে ফাইল সই করে দ্রুতগতিতে দেশে পাঠাতে পারছি।’

প্রধানমন্ত্রী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই সময় আরো অনেক বেশি জনবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি এইটুতুই বলবো যে, মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করবেন তাঁরা ঐখানকার মানুষের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। আর তাঁরা (জনগণ) যেন ন্যায় বিচার পায় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু গতানুগতিক ভাবে দেশ চালালে চলবে না। দেশকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১১০, ১১১ এবং ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের শিক্ষার্থীদের মঝে সনদ বিতরণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে পৃথক ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর