রাজনৈতিক প্রভাবে সুশাসন থেকে বঞ্চিত জনগণ: টিআইবি

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 15:26:50

রাজনৈতিক সৎ ইচ্ছার অভাবে সরকারি জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার চর্চার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শুধুমাত্র শুদ্ধাচারে উল্লেখিত বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করায় একটি মিশ্র চিত্র তৈরি হয়েছে। এ কারণে দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন, জবাবদিহিতা তৈরি হচ্ছে না বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার : নীতি এবং চর্চা বিষয়ক’ একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ জন্য প্রতিবেদনে নয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে। গুণগত পদ্ধতিতে ২০১৮ সালের জুন হতে ২০১৯ সালের তথ্য সংগ্রহের উপর এ গবেষণাটি করা হয়।

টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানপ্রশাসনে শুদ্ধাচার নীতিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবছর হিসাব দেয়ার কথা থাকলেও তারা সম্পদের বিবরণ দিচ্ছেন না। প্রতিবছর নিয়মিতভাবে শূন্যপদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রতিবছর ২৩ শতাংশ পদ খালি থেকে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে সিনিয়র সহকারী থেকে সমপর্যায়ের পদে ২৭ শতাংশ ও সহকারী সচিব বা সমপর্যায়ে পদে ২৯ শতাংশ পদ শূন্য থাকছে। সাম্প্রতিক সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নিয়োগের বেশির ভাগ যোগ্যতার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছায় নিয়োগ হচ্ছে। যা ২০১২ সালে ছিলো ৫ জন, যা ২০১৭ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিভিন্ন প্রণোদনায় শুদ্ধাচার বৃদ্ধির পথে বাস্তব কোনো অগ্রগতি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হলেও দুর্নীতি কমছে না। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি সুবিধা বাড়ানো হলেও তারা নিজেদের গাড়ি ব্যবহার না করে পরিবহন পুলের গাড়ি ব্যবহার করছেন। ক্যাডার সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য থাকায় তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবি’র সুপারিশগুলো হলো:

সরকারি কর্মচারী আইন ১৯৭৯ কে শুদ্ধাচার কৌশলের আলোকে হালনাগাদ করা, আয়কর প্রদাণের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রদানে সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল কাঠামো তৈরি করে সে অনূযায়ী বার্ষিক সম্পদের হিসাব নিশ্চিত করা, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংবিধান পরিপন্থি ও ঝুঁকিপূর্ণ ধারা বাতিল, এ আইনে সরকারি ধারাটি পরিবর্তন করে প্রজাতন্ত্র শব্দ যুক্ত, জনপ্রশাসনে উচ্চপদগুলো শূন্য পদের বিপরীতে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিয়ে নিচের পদগুলো পূরণ, পদোন্নতিতে বৈষম্যদূরীকরণ করে সকল ক্যাডারদের সমান সুযোগ দেয়া, প্রশাসন ক্যাডার থেকে টেকনিক্যাল ক্যাডার না দিয়ে টেকনিক্যাল দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্বে বসানো, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্কোর ও দক্ষতা মূল্যায়ন করে পদোন্নতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মজীবন উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা কার্যকর করা ও তথ্য প্রকাশ আইন-২০১১ বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদন বিশ্লেষণে বলেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসনের শুদ্ধাচার কিছু কিছু স্থানে বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা উপেক্ষিত হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় তারা অসন্তোষ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ১১টি শুদ্ধাচার কৌশলের মধ্যে মাত্র ৫টি বাস্তবায়ন হলেও শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে, বাকীগুলোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ তে কাউকে আটক করতে হলে তার নিয়োগ প্রদানকারীর অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি সংবিধান লঙ্ঘন করে। এতে করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি-অনিয়ম করার প্রবণতা বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ এন্ড পলিসি সিনিয়র প্রোগাম ম্যানেজার শাহাজাদা এম আকরাম, টিআইবি’র নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ এন্ড পলিসি পরিচালক মো. রফিকুল হাসান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর