জাতীয় চিড়িয়াখানা কতটুকু দর্শনার্থীবান্ধব

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:57:14

রাজধানীর উত্তর-পশ্চিম কোনে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা কতটুকু দর্শনার্থীবান্ধব সে নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। বিশেষ করে প্রধান সড়ক ও ফুটপাত নিয়ে দর্শনার্থীদের আপত্তি অনেক পুরনো। কিন্তু কোনই সুরাহা হচ্ছে না, দিন দিন আরও অবনতির দিকেই যাচ্ছে।

ফুটপাতজুড়ে হাজার হাজার দোকান। প্রভাবশালীরা বাঁশের খুটির উপর ত্রিপল দিয়ে খাবার হোটেল ও ক্যারম জুয়া চালু করেছেন। বলার কিংবা দেখার যেন কেউ নেই।

চিড়িয়াখানা অভিমুখী সড়কে চিড়িয়াখানার আগে হাতের বামে প্রথমে পড়বে বিসিআইসি কলেজ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাবানী বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড ও কেন্দ্রীয় মুরগি খামার। এই তিন প্রতিষ্ঠান পার হলেই চিড়িয়াখানার মূল ফটক দৃশ্যমান হবে।

ফোর লেন বিশিষ্ট প্রধান সড়কটির উল্লেখিত তিন প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটপাত বেশ প্রশস্ত। এমন প্রশস্ত ফুটপাত রাজধানীর আর কোথাও দৃশ্যমান নয়। প্রায় মহাসড়কের মতো প্রশস্ত। কিন্তু সেই ফুটপাতে এখন শত শত দোকান। কেউ বাঁশের খুটি দিয়ে, আবার কেউ ঠেলাগাড়িতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিটি করপোরেশন নিজেও এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। কেন্দ্রীয় মুরগি খামারের সামনে প্রশস্ত ফুটপাত পুরোটাই দখল করে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছে। সেটাকে এড়িয়ে পথচারীদের রাস্তায় নেমে পথটুকু পার হতে হচ্ছে। এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে না পেরে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাতেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না দর্শনার্থীদের। সেখানেও হকাররা বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আখের রস, লেবুর সরবত, ঠাণ্ডা পানি, কসমেটিকস পণ্য, বুট-বাদাম; কী নেই সেখানে!

আবার অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করা রাস্তার উপর। অর্থাৎ চিড়িয়াখানামুখী দুই লেনের সড়কটির মাত্র একটি লেন দিয়ে চলতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। এ কারণে বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে।

জাতীয় চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। জাতীয় স্থাপনা দুটির সামনে বিশাল এলাকাজুড়ে সড়কদ্বীপ। শুঁড় উঁচিয়ে স্বাগত জানানোর ভঙ্গিতে হাতির ম্যুরাল। সেই সড়ক দ্বীপ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নাক চেপে পার হতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের।

সড়ক দ্বীপের চারপাশে শত শত হকার। কেউ ভ্যান কেউবা ঝুঁড়ি ভরে নানারকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। দেখতে অনেকটা গ্রামীণ মেলার মতো। অবৈধ দোকানের কারণে যানবাহনগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে না। যানজট এখানে নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঈদের পর দিনও অনেক পুলিশ সদস্য আশপাশে ডিউটিরত রয়েছেন। ভাবখানা এমন যেন তাদের কিছুই করার নেই!

সর্বত্র যেন অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্নতার ছড়াছড়ি। যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকলেও প্রধান সড়কে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না দর্শনার্থীদের। যে কারণে একবার কেউ গেলে দ্বিতীয়বার আর এই পথ মাড়াতে চান না।

মাসুদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ঘুরতে এসে কে দুর্ভোগ পোহাতে চায়? গাড়ি আটকে আছে জ্যামে, নেমে রওয়ানা দিয়েছি। কিন্তু ফুটপাত কি আছে? হাটব কিভাবে? দেখে মনে হচ্ছে সবার অবাধ স্বাধীনতা, যার যা খুশি তাই করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, পুরো ফুটপাত বন্ধ করে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এই জায়গাটি পার হবো কিভাবে? সিটি করপোরেশন একবারও কি ভেবেছে? ডিজাইনটা ঘুরিয়ে পায়ে হাঁটার পথ রেখেও পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন মাসুদ মিয়া।

এ সম্পর্কিত আরও খবর