বিসিএস সাধারণ ক্যাডার পদে বেতার উইং নিয়ে অসন্তোষ

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 09:31:00

বিসিএস (তথ্য) সাধারণ ক্যাডার পদে ভাগ বসাচ্ছেন বিসিএস (তথ্য) বেতারের কর্মকর্তারা। এতে অসন্তোষ বাড়ছে বিসিএস (তথ্য) সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঝে।

এই পদায়ন প্রক্রিয়ায় সার্ভিসের কার্যবিধিমালা, অধিদফতরের দায়িত্ব ও কার্যাবলি মানা হয়নি। অবিলম্বে বেতারের পদায়নকৃতদের ফেরত নেওয়া ও নতুন করে পদায়ন না করার দাবি জানিয়েছে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন।

সাধারণ ক্যাডারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিসিএস (তথ্য) সাধারণ, বিসিএস (তথ্য) বেতার উইং ও বিসিএস (তথ্য) প্রকৌশল উইং পৃথক তিনটি ক্যাডার। তিনটি গ্রুপের ক্যাডার কম্পোজিশন এন্ড ক্যাডার রুলস (১৯৮০), বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস (১৯৮১) ক্যাডার তফসিল, কার্যবণ্টন তালিকা ও ক্যাডার স্ট্রেংথ সম্পূর্ণ আলাদা।

বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস (১৯৮১) ১৯৯৯ সালে হালনাগাদ করার সময় তিনটি গ্রুপের পদসোপান, পদোন্নতির ধাপ ও পদোন্নতির শতার্বলী পৃথকভাবে প্রণীত হয়। এখানে স্পষ্ট করে তিনটি ক্যাডারকে আলাদা করে পদবিন্যাস করা হয়।

সাধারণ ক্যাডারের বাই প্রমোশন অ্যাডিশনাল প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (তথ্য অধিদফতর), পরিচালক ( চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদফতর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ)। একইভাবে বেতার উইংয়ের ক্যাডারদের জন্য বাই প্রমোশন ডেপুটি ডিরেক্টর ( প্রোগ্রাম নিউজ/ প্রধান প্রকৌশলী) নির্ধারণ করা হয়েছে। বেতার প্রকৌশল উইংয়ের বাই প্রেমোশন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কথা বলা হয়েছে।

১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির প্রতিবেদনেও বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে তিনটি গ্রুপ বিদ্যমান। ১৯৮৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রকাশ করে। সেখানেও তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তালিকায় দেখানো হয়েছে এই তিনটি গ্রুপের কর্মকর্তাদের।

বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস (১৯৮১) এ সাধারণ ক্যাডারদের জন্য তথ্য অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদফতর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড তফসিল ভুক্ত করা হয়।

বেতার উইং ও বেতার প্রকৌশল গ্রুপের কর্মকর্তাদের বেতার অধিদফতরে সীমাবদ্ধ করা হয়। এখানে বেতার উইংকে আবার অনুষ্ঠান ও বার্তা বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। একই অধিদফতর হলেও অনুষ্ঠান বিভাগের লোকজনকে বার্তা বিভাগে পদায়ন করার সুযোগ নেই। এমনকি রেকর্ডও নেই বলে জানা গেছে।

তথ্য অধিদফতর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার দফতর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রচার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তথ্য অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামোতে তথ্য অফিসার ও সিনিয়র তথ্য অফিসারের পদ সুনির্দিষ্ট করা আছে। এ সকল কর্মকর্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য একজন সিনিয়র কর্মকর্তার পদ সুনির্দিষ্ট করা আছে। বেতারে এমন কোনো কাঠামো নেই।

কিন্তু বেতারের অনুষ্ঠান উইংয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তথ্য কর্মকর্তা পদে পদান্বিত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দফতর, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দফতরসহ ১৩টি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। একে আইনের পরিপন্থি বলে দাবি করেছেন সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

যেভাবে শুরু হয় এই পদায়ন প্রক্রিয়া: এক-এগার’র সময়ে বেতার থেকে একজনকে ডেপুটেশনে পাঠানো হয় তথ্য অধিদফতরে। পরবর্তীতে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের নজরে আসতে সক্ষম হন ঐ কর্মকর্তা। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বেতারের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়। মোট ৫২টি পদের বিপরীতে ১৩ জন রয়েছেন বেতারের। আর ৩৯ জন সাধারণ ক্যাডার থেকে। আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রণালয়ে ঢোকার জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতা গোলাম কিবরিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এর আইনগত বৈধতা নেই। সরকারি কোনো ফর্মুলায় পড়ে না। মন্ত্রী ও সচিবের কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

বেতার থেকে নিয়োগ পাওয়া কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সেটেল বিষয়, অনেকদিন ধরেই আছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এক সঙ্গে করি।’

‘রাষ্ট্রপতির দফতর, পিএমও-তে ওদেরও লোক আছে আমাদেরও লোক আছে। মিশনে আমাদের লোকই বেশি রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ নন ক্যাডার নেই। ওদের কেউ কেউ আছেন যারা প্রমোশন পেয়ে এখানে এসেছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর