ট্রাফিক সপ্তাহতেই সীমাবদ্ধ থাকছে শিক্ষার্থীদের দাবি

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-13 09:01:40

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গোটা রাজধানী জুড়ে আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনে নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

গেল এক বছরে ৯ দফা দাবির কয়েকটি পূরণ হলেও, প্রধান দাবিগুলো বাস্তবায়িত হয়নি বলে আক্ষেপ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, 'ঘটনার পর ট্রাফিক সপ্তাহ, ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষ, ট্রাফিক মাসে হয়েছে। তাছাড়া সড়ককে নিরাপদ রাখার জন্য কোন কাজ হয়নি।'

মঙ্গলবার (২০ মার্চ) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সেখানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। বিইউপিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী এতে যোগ দিয়েছেন। এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সিটি কলেজ, ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে রাজধানী ঘুরে একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের দেওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা আবারও মাঠে নেমেছেন।

সাইন্সল্যাব মোড়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মেহতাব খানম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'গত বছর যখন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। তখন আমার বেশ কিছু দাবি দিয়েছিলাম এ দাবির মধ্যে কয়েকটি পূরণ হলেও মূল দাবিগুলো পূরণ হয়নি। শুধু ট্রাফিক সপ্তাহে গাড়িতে মামলা দেওয়া ছাড়া অন্য কিছুই লক্ষ্য করা যায় নাই।'

শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জুবায়ের বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র ছাত্রীদের দায়ভার সরকারের নেওয়ার কথা ছিল। ওই দায়ভার সরকার নিয়েছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে যে ফুটওভার ব্রিজ দেওয়ার কথা ছিল, সেটা এখনো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি প্রশাসন।'

ফার্মগেট তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'গত বছরের ঘটনা পর আমরা যে ৯ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এক বছরে শুধু ট্রাফিক সপ্তাহে মোটর বাইকের জরিমানা ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। ট্রাফিকের চোখের সামনে দিয়ে লাইসেন্সবিহীন গাড়ি রাজধানীতে ছুটে চলছে। দেখার কেউ থাকে না।'

ধানমণ্ডি ২৭ এ অবস্থানরত ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ আহমেদ একই বিষয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া ব্যবস্থা করা হোক এমন একটা দাবি করা হয়েছিল। ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের বাসে দেখলেই বাসের হেলপার বাজে আচরণ করে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা নিষেধ, নির্ধারিত জায়গায় বাস থামার কথা বলা হয়েছিল। সেটাও মানছে না। জানতে ইচ্ছে করে তাহলে গত ১ বছরে কি পেলাম আমরা।'

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ফলে গণপরিবহনে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিল, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচল বন্ধ থাকবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পরিবর্তনই সড়কে দেখা যায়নি।'

অন্যদিকে আরবার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেওয়া সুপ্রভাত বাসের চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। হালকা যান চালানোর লাইসেন্স নিয়েই তিনি বাসের মতো ভারী যান চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এটা জানার পর শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, শুধু লোক দেখানো ট্রাফিক সপ্তাহ আমরা দেখেছি। যার সর্বশেষ প্রমাণ সুপ্রভাত গাড়ি চালকের লাইসেন্স ছিল না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর