‘হজে অনিয়ম বন্ধে তৃতীয় পক্ষ নয়, এজেন্সির সঙ্গে লেনদেন করুন’

ঢাকা, জাতীয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম | 2024-01-03 20:02:56

২০১৭ সালের হজ মৌসুমে হজযাত্রার শেষ দিকে ‘প্রশিক্ষণের নামে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের কাছ থেকে ৩০০ করে টাকা নিয়ে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে’ বলে মন্তব্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম। সেবারই প্রথম হাবের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।

 

তিনি হিসাব করে দেখান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের নামে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৩০০ করে সর্বমোট ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা আদায় করেছে। কিন্তু এর বিনিময়ে হজযাত্রীদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তার এই প্রতিবাদ দারুণভাবে কাজে লাগে। হজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয় আশকোনা হজক্যাম্পসহ দেশের জেলাগুলোতে। এমনকি কোনো হজযাত্রী ওই প্রশিক্ষণে অংশ নিলে তাকে ৩০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

এভাবে হজের মতো পবিত্র বিষয় নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা প্রায়ই শোনা যায়। বিষয়টি বেশ উদ্বেগ সৃষ্টির মতো। হজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসভিত্তিক সক্রিয় সিন্ডিকেটের পাশাপাশি একশ্রেণির বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার মুখে মক্কা-মদিনায় হাজীদের নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।

শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য এবং বেশিরভাগ মুসলমান বছরে একবার যান বলে এজেন্সিগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন না। নীরবে সহ্য করেন।

আল্লাহপ্রেমী মানুষদের এ সরলতাকে পুঁজি করে অনৈতিক ব্যবসা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে কথাগুলো বলছিলেন হাব-এর মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।

হজযাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘হজে অনিয়ম বন্ধে কোনো তৃতীয় পক্ষ নয়, সরাসরি এজেন্সির সঙ্গে লেনদেন করুন। দেখবেন হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি থাকবে না।’

মক্কা-মদিনায় হাজীদের জন্য ভাড়া করা বাড়ির মান, খাবারের মান এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারপরও আরও ভালো করার চেষ্টা করতে হবে এজেন্সি কর্তৃপক্ষের। সেই সঙ্গে হজে যাওয়ার উদ্যোগের শুরু থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত হাজীরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করার জন্য হাব কাজ করছে।’

একদিকে চলছে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন, অন্য দিকে আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হাব-এর দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য হাবের বর্তমান কমিটির মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে একটি প্যানেলের প্রধান হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

হজ এজেন্সি, হজযাত্রী ও হজ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে সোচ্চার এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম কুমিল্লা সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মরহুম মাওলানা রশিদ আহমেদের ছেলে। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তসলিম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার্থে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইর্য়ক থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে গড়ে তোলেন উদ্যোক্তা হিসেবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসাইন তসলিম হাবের নেতৃত্বে আসেন ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল।

হাব নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বিভিন্ন এজেন্সির মালিক ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আসন্ন হাব নির্বাচনে একটি প্যানেলের প্রধান অর্থাৎ সভাপতি হিসেবে ঘোষিত শাহাদাত হোসেন তসলিম ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রার্থী।

হাব মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে শাহাদাত হোসেন তসলিম হজ এজেন্সি ও হাজীদের কল্যাণে নানামুখি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও তা বাস্তবায়ন করেছেন। তার শক্ত অবস্থানের কারণে হাজীদের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে কোটা ও রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য।

হাবের যুক্তির প্রেক্ষিতে এবার বিমান ভাড়া ১০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে, হাজীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রথা বাতিল করা হয়েছে। হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন সার্ভার সব সময় খোলা রাখা ও সর্বশেষ এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর সংখ্যা দেড়শ জনের স্থলে ১০০ জন করার সিদ্ধান্তে সৌদি আরবের অনুমোদনও তার অন্যতম সফলতা।

বিগত দুই হজ মৌসুমে হজ কার্যক্রমে নিজে দায়িত্ব নিয়ে সৌদি দূতাবাসে ছুটোছুটি করে হাজীদের ভিসা করিয়ে শেষ ফ্লাইটে তিনি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার ঘটনাও সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।

সর্বশেষ ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সৌদি আরব থেকে ঘুরে এসেছেন গতমাসে। সৌদি সফরের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশা করছি চলতি হজ মৌসুমেই বাংলাদেশ অতিরিক্ত হজ কোটা পাবেন। এ বিষয়ে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মিনায় হাজীদের দ্বিতল খাটে থাকার বাধ্যবাধকতা থেকে বাংলাদেশি হাজীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রী আমাদের বলেছেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, ভবিষ্যতে মক্কার মুয়াসসাসা ও মদিনার আদিল্লা অফিসে বাংলাদেশি হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষকে আর কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হবে না।

প্রথা অনুযায়ী হাব নির্বাচনে শুধুমাত্র প্যানেল প্রধানের (সভাপতি) নাম ঘোষণা করা হয়। তার নেতৃত্বে অন্যরা সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে বিজয়ীরা পরে মহাসচিব নির্বাচিত করাসহ কেবিনেট গঠন করেন।

আসন্ন হাব নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হলে তিনি আর কী কী করতে চান জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মহাসচিব পদে দায়িত্বপালনকালে হজ এজেন্সি ও হাজীদের কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। সব ধরনের অন্যায়-অপকর্মের ঘোর বিরোধী ছিলাম। কোনো লোভ করিনি, নিজে সৎ ছিলাম; ভবিষ্যতেও সৎ থাকবো- ইনশাআল্লাহ

সভাপতি নির্বাচিত হলে শাহাদাত হোসেন তসলিম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি কাজ করতে চান। এসব কাজের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে তিনি সৌদি সরকারের সঙ্গে শুরু করেছেন এবং আলোচনা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। কাজগুলো হলো-

এক. বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের সব কাজ সৌদি আরবে না করে বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা। ফলে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে হজযাত্রীদের আর সৌদি বিমানবন্দর যেয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য কষ্ট করতে হবে না।

দুই. হজ ও ওমরাহ দু’বার করলে পরের বছর হজযাত্রীদের অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে দুই হাজার রিয়াল যেন না দিতে হয় সেই ব্যপারে আলোচনা চলছে।

তিন. এজেন্সির মালিকরা সাধারণত মোনাজ্জেম (হজ ব্যবস্থাপক) হয়ে থাকেন। তাদের সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে যে স্বল্প মেয়াদে ভিসা দেওয়া হয় তাতে তারা কাজ শেষ করতে করতে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা হাজিদের সেবায় মনোযোগ দিতে পারেন না। তাদের ভিসা ছয় মাস করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন।

চার. হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার যুক্ত করা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ ও হজ এজেন্সির মালিকদের সহযোগিতায় হজ কার্যক্রম যেভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় তার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। তার প্রত্যাশা, হজের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ও হজফ্লাইট নিয়ে জটিলতাসহ হজ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এবার আর কোনো ঝামেলা হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর