প্রভাতফেরিতেও বিষাদের ছায়া

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ-দৌলাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 06:41:16

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবারের মত এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু নতুন বিষাদের কালো ছায়া নেমে এসেছে প্রভাতফেরীতে। একুশের প্রথম প্রহরের কিছুটা আগে পুরান ঢাকার চকবাজারে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০ টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ গোটা দেশ। সেই শোক ছুঁয়ে গেছে প্রভাতফেরিতে আসা নানা বয়সী মানুষকেও।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর থেকে মানুষের ঢল নামে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সাদা কালো পোশাকে নগ্ন পায়ে ফুল দিয়ে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভাষা শহীদদের প্রতি। রাত ১২টা ১টি মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ভোর রাত থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে মানুষের ঢল বাড়তে থাকে।

তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী, শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পুষ্পস্তবক হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ মিনারের বেদীতে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে শহীদ মিনার চত্বরে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদি শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে পূর্ণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে ফুলগুলো সাজিয়ে রাখছেন। শহীদ মিনার অভিমুখী লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন হাজারো মানুষ। মঞ্চ থেকে নাম ঘোষণার পর থেকে তারা ব্যানার গুটিয়ে বিনম্রভাবে শহীদদের স্মরণ করছেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ কালজয়ী গান মাইকে ভেসে আসে।

তবে অন্যবারের প্রভাতফেরির চেয়ে এবারের প্রভাতফেরি আরও কিছুটা বিষাদময়। কারণ বুধবার রাতে (২০ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা কতটা তীব্র সেটা জানা যায় সকালে। একে একে আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধারের খবর একুশের প্রভাতকে করে তোলে আরও বিষাদময়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছে। প্রভাতফেরিতে আসা মানুষের মুখে এখন সে অগ্নিকাণ্ড নিয়েই আলোচনা।

ঢাকা মেডিকেলের পাশেই শহীদ মিনার। প্রভাতফেরিতে আসতে থাকা মানুষগুলো শুনেছে অ্যাম্বুলেন্সে মাইকের গগনবিদারী চিৎকার। প্রভাতফেরির লাইনে থাকা কয়েকজন জানান, ভোরবেলা থেকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে অগ্নিকাণ্ডের আহতের ঢাকা মেডিকেলে আনা হচ্ছিল। কিন্তু তখন বুঝিনি দুর্ঘটনা কতটা মারাত্মক। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিহত হওয়ার খবর পেতে থাকি আমরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'একুশ যেমন শোক, তেমনি শক্তির। কিন্তু ঠিক এই দিনেই আমরা হারালাম আমাদের
ভাই-বোনদের। পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ড আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল কতটা অসহায় হয়ে আমরা এই নগরীতে বাস করি।'

পল্লবীর বাসিন্দা শামসুদ্দিন আহমেদ। পেশায় একজন বেসরকারি কর্মকর্তা। মেয়েকে নিয়ে তিনি এসেছেন প্রভাতফেরিতে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনিও বলেন, 'একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শক্তি। পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেটা থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।'

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম চলছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর