বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপোতে নষ্ট হচ্ছে ৩০ বাস

চট্টগ্রাম, জাতীয়

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:55:51

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন(বিআরটিসি) চট্টগ্রাম ডিপোতে নষ্ট হচ্ছে ৩০টি বাস। কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসব বাস খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে ধ্বংসের পথে, জং ধরেছে গাড়ির ইঞ্জিনগুলোতে।

পর্যাপ্ত টেকনেশিয়ানের অভাব ও প্রয়োজনীয় মেরামত খরচ না পাওয়ায় সড়কে নষ্ট হওয়া গাড়িগুলো রাস্তায় আর ফিরছে না। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

নগরীর বালুচরা বিআরটিসি কার্যালয়ে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মাঠে অবস্থিত জরাজীর্ণ পুরোনো ভবনে বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপো। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে খোলা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে বিআরটিসির বিভিন্ন মডেলের বাস। এর মধ্যে রয়েছে ডাবল ডেকার বাস, সাধারণ ও এসি বাসসহ বিভিন্ন ধরনের ৩০টি বাস। যার বেশিরভাগই অকেজো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রোদ-বৃষ্টিতে লালচে রঙের বাসগুলো ধুলোবালির আস্তরণ জমতে জমতে ধূসরবর্ণ ধারণ করেছে। বাসগুলোর কোনোটির ইঞ্জিন খোলা, কয়েকটির আবার চাকা নেই। কিছু বাসের অন্যান্য যন্ত্রাংশ খুলে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ বাসেরই জানালা ও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি স্ক্র্যাপ বাসে দরপত্র কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাদা কাগজে টানানো হয়েছে প্রস্তুতের সাল।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য সরকারিভাবে বিআরটিসির ৫০০ বাস থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৪৬টি। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় রুট কমতে কমতে ৯টিতে নেমে এসেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিআরটিসি অফিসের নিয়ন্ত্রণে ৭৬টি গাড়ি থাকলেও নষ্ট হয়ে গ্যারেজে পড়ে আছে ৩০টি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় সংকুচিত হতে হতে একটা প্রতীকী সার্ভিসে পরিণত হয়েছে বিআরটিসি।’

বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেকগুলো বাস নষ্ট হচ্ছে। সেগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে সার্ভিসিং অথবা টেন্ডার দিয়ে বিক্রয় করা হয়। আমরা এখান থেকে কিছুই করতে পারি না। গাড়ি নষ্ট হলে গ্যারেজে ফেলে রাখতে হয়।

তিনি বলেন, আমার এ অফিসে জনবল নেই। আমরা মাত্র তিন জন কর্মকর্তা। ড্রাইভার আছে ৭০ জনের মতো। পর্যাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব রয়েছে। চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যে চলতে হচ্ছে আমাদের। ২০১১ সালের আগে তিনটি প্রকল্পের অধীনে চলমান বাসগুলো বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়। এরপর নতুন করে আর কোনো বাস যুক্ত হয়নি।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বেসরকারি বাস মালিকদের নৈরাজ্য ঠেকাতে এ সার্ভিস চালু করলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রায়ই এমপি-মন্ত্রীদের আবদার মেটাতে ব্যক্তিখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিআরটিসির এসব বাস। এ ছাড়া সরকারি এসব বাস ভাড়ায় ব্যবহার করে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।

প্রতিদিনই দেখা যায়, যাত্রীদের ঠেলাঠেলি করে বাদুরঝোলা হয়ে মানুষ চলাচল করছেন বেসরকারি বাসে। এসব বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যাত্রী হয়রানির নানা অভিযোগ।

তাই যাত্রী ভোগান্তি কমাতে ১৯৬২ সালে সরকারিভাবে গণপরিবহণ হিসেবে চালু করা হয় বিআরটিসির বাস সার্ভিস। প্রথম দিকে কিছুটা সেবা পেলেও এখন একেবারে ভেঙে পড়েছে সরকারি এ সেবাখাত। কমেনি জনদূর্ভোগ। উল্টো তা বেড়েছে বহুগুণ। কালেভদ্রে রাস্তায় দেখা মেলে বিআরটিসি বাসের। আর ভাড়াও আদায় করা হয় বেসরকারি বাসের মতোই।

বিআরটিসির চট্টগ্রাম ডিভিশনে ১৭টি রুট থেকে কমে বর্তমানে ৯টিতে নেমে এসেছে। বহরে বর্তমানে যে বাসগুলো আছে তার অধিকাংশই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, নেতৃত্বের সংকট আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিআরটিসি ধুঁকে ধুঁকে মরছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর