বৃষ্টি নয়, রোদ চান হাওরের কৃষকেরা

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম. কটিয়াদী ( কিশোরগঞ্জ) | 2024-04-27 14:35:31

সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। অসহ্য গরম থেকে রেহাই পেতে বৃষ্টি চেয়ে দেশজুড়ে ইসতিসকার নামাজ পড়া হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বৃষ্টি চান না ধান চাষিরা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও লাহুন্দ বড় হাওরের কৃষক কাশেম মিয়া (৫৫) বলেন, আকাশে তাকাইয়া তাহি, দিনে হাজ (মেঘলা) করলো কিনা। রইদ (রোদ) থাকলে আমাদের সমস্যা নেই, হয়তো কষ্ট বেশি হচ্ছে তবে মন শান্তি। পানি চলে আসলে আমাদের সব স্বপ্ন শেষ।

হাওর অঞ্চলে এখন ধান কাটার ভরা মৌসুম চলছে। কৃষি বিভাগও ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার তাগিদ দিয়েছে।

কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বন্যার আশঙ্কায় আগেভাগে তারা ধান কেটে ফেলেন। যদিও আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত কিংবা বন্যা পরিস্থিতির কোনো পূর্বাভাস নেই।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, আগামী ১০ দিন পর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে– এমন তথ্য এখন বলা যাচ্ছে না। তবে এ সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। ফলে হাওরের সিংহভাগ ধান নির্বিঘ্নে কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

এক সময় বৈশাখের মধ্যভাগে বোরো ধান কাটা শুরু হতো। কিন্তু বন্যা থেকে সুরক্ষায় আগাম জাতের ধান আবাদের ফলে এখন চৈত্রের শেষ দিকেই ধান কাটা শুরু হয়। গত মঙ্গলবার করিমগঞ্জ-ইটনার সীমান্তবর্তী হাওরে শ্রমিকদের আগাম জাতের ‘ব্রি-২৮’ ও হাইব্রিড ‘হীরা’ ধান কাটতে দেখা যায়। এসব ধান খলায় নিয়ে ‘বোমা মেশিনে’ মাড়াই করা হচ্ছে।

নিকলীর জোয়ানশাহী হাওরের জিরাতি কৃষক রহমত বলেন, জিরাতিরা বাড়িঘর ফেলে খড়কুটো বা টিন দিয়ে কুঁড়েঘর করে হাওরের মাঝখানে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কাটান। তাদের পরিশ্রমেই কৃষকের গোলা ধানে ভরে ওঠে।

মাঠেই ভেজা ধান প্রতিমণ ৯০০ টাকা করে বিক্রি করছেন কৃষকরা। মিঠামইনের কৃষক সোহরাব উদ্দিন জানান, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে ১৫ দিন সময় পেলে হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে। নিকলীর কৃষক মোজাহিদ সরকার বলেন, এ পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের প্রায় ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।

নৌপথে বড় বড় বাল্কহেড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নতুন ধান করিমগঞ্জের চামড়া নৌবন্দরের আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। আড়ত মালিক আলতাফ হোসেন জানান, এখন হীরা ৭৫০ ও ব্রি-২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ দরে কিনছেন তারা।

অবশ্য এতে গৃহস্থের লোকসান হচ্ছে জানিয়ে কৃষক জালাল উদ্দিন ও আক্কাস মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঋণের টাকা পরিশোধ ও শ্রমিকের খরচ মেটাতে অনেকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। আড়ত মালিকরা এ সুযোগ নিয়ে দাম কম দেন।

এক মণ ধান উৎপাদনে খরচই প্রায় হাজার টাকা। অথচ শুরুতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে বলেন তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরেই আবাদ ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই সব ধান কাটা শেষ হবে। আপাতত বন্যার পূর্বাভাস নেই। তবে অনেক সময় শিলাবৃষ্টি হলে ধানের বিশাল ক্ষতি হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর