মোংলায় ‘রসু খাঁ’ খ্যাত টিএ ফারুকের মনোরঞ্জনে শতাধিক নারী!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট | 2024-04-23 19:42:07

‘ভাড়াটে গুণ্ডা’ দিয়ে স্ত্রীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে, বাগেরহাটের মোংলার বহুল আলোচিত ‘রসু খাঁ’ খ্যাত শিল্পপতি টিএ ফারুকের (তালুকদার আখতার ফারুক) বিরুদ্ধে।

বহুবিবাহের নায়ক এ শিল্পপতির বিরুদ্ধে রয়েছে, নারী কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ। কখনো নিজে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আবার কখনো অধীনস্থ কর্মচারীদের বিয়ে করিয়ে নারীদের রক্ষিতা হিসেবে বানিয়ে রাখছেন তিনি।

আলোচিত এই টিএ ফারুকের সর্বশেষ লালসার শিকার হয়েছেন দুই সন্তানের এক জননী (২৫)। উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের এ নারীর সঙ্গে বছর দুই আগে ফারুকের পরিচয় হয়। এরপর নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সংসার ভেঙে বিয়ে করেন তিনি।

বিয়ের পর ফারুকের জলসাখানা শতরূপা বরফ কলের দ্বিতীয়তলার ভবনে ওঠেন এই স্ত্রী  নিয়ে। এখানে বছর দেড়েক ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সুমির চোখে ধরা পড়ে স্বামী টিএ ফারুকের বহু নারীগামিতা। আর এ নিয়ে হঠাৎ করে শুরু হয়, পারিবারিক দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে স্ত্রী তাড়াতে শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন কী গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে তীব্র তাপদাহের মধ্যেই স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেন।

পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় সুরাহা হয় এবং ফের ঘরে ওঠেন স্ত্রী।

টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সংবাদমাধ্যমের কাছে তার স্বামী সম্পর্কে অভিযোগ করছেন, ছবি-বার্তা২৪.কম

সর্বশেষ, সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১০টায় ২৫/৩০ জনের একদল ‘ভাড়াটে গুন্ডা’ স্ত্রীর ঘরে হানা দিয়ে তাকে মারধর করে সাদা স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটে শতরূপা বরফ কলে। রাতেই প্রতিবেশীরা টিএ ফারুকের স্ত্রীকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনি এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির আমলে টিএ ফারুকের (তালুকদার আখতার ফারুক) উত্থান হয়। বিগত কয়েক দশক তিনি এ রাজনৈতিক দলটির উপজেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি কয়েক দফায় রাজনৈতিক খোলসও বদল করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

টিএ ফারুক পেশায় একজন শিল্পপতি ও আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী। কিন্তু তার নেশা মোবাইল ফোন ও দালালদের মাধ্যমে কিশোরী ও নারীদের সুকৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এরপর নিজের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেন।

এভাবে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের অসংখ্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়েছেন টিএ ফারুক।

নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে দিনরাত মোংলা পৌর শহরের শ্রম কল্যাণ রোডের তার জলসাখানায় আড্ডা চলে। এ নিয়ে অতিষ্ঠ এলাকার আশপাশের লোকজন।

নারীদের সঙ্গে প্রেম, অতঃপর ভোগ-বিলাসের তার এই কাজে সহযোগিতায় নিযুক্ত আছেন ১৫/২০ জনের একটি দালাল সিন্ডিকেট।

এ সিন্ডিকেট মোংলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অসহায় গরিব পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের বাড়ি-জমিসহ মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা নিয়ে আসেন ফারুকের জলসাখানায়। সেই জলসাখানা ঘিরে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে ‘মিনি যৌনপল্লী’।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন রহস্যজনকভাবে চুপ থাকায় ফারুকের এই অপকর্ম চলে আসছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শতরূপা বরফ কল ও হোটেল সিঙ্গাপুর এবং চৌরঙ্গী হোটেলসহ একাধিক স্থানে টিএ ফারুকের এরকম ঘাঁটি রয়েছে।

টিএ ফারুকের বয়স এখন ৭০-এর ঘরে। তার নামে বহু নারীগামিতা নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা থাকলেও টিএ ফারুকের বিয়ের সঠিক তথ্য কেউ নিশ্চিত করে দিতে পারেননি।

ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেন, এ পর্যন্ত তার স্বামীর (টিএ ফারুক) শতাধিক বিবাহের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। এছাড়া আরো শতাধিক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিএ ফারুকের হোটেল ম্যানেজার সোহাগ জানান, তার বস যখন যা নির্দেশ করেন, তখন তাই-ই করতে হয় তাকে। এক্ষেত্রে তার কোনো দোষ নেই। তবে টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রীকে তিনি ‘ম্যানেজ’ করেছিলেন বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম জানান, টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রীকে নিয়ে পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

মোংলা উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সভাপতি এইচএম দুলাল বলেন, টিএ ফারুকের বরফ কলে দিন-রাত উঠতি বয়সের নারীদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে। এতে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয় প্রশাসনের নজরদারিসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না জানান, নারীদের প্রতি তার এমন অসম্মান সামাজিকভাবে নৈতিক অবক্ষয় ও দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

টিএ ফারুকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সব বিষয়ে জানতে টিএ ফারুককে (তালুকদার আখতার ফারুক) একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। এরপর বক্তব্যের জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর আবাসিক হোটেলে গেলে (টিএ ফারুক) পরে কথা বলবেন বলে দরজা বন্ধ করে দেন ফারুক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর