পহেলা বৈশাখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী, গ্রেফতার ৫

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2024-04-19 11:44:33

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারের অভিযোগ করেছেন এক তরুণী (১৯)। তার করা মামলায় এরই মধ্যে অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে আসামিরা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. রাহাত (১৮), মো. সোহাগ আলম (২০), শহিদুল ইসলাম (২১), মিলন (২৩) ও মো. মাসুম (২৫)

১৪ এপ্রিলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে দুই সহকর্মীর সঙ্গে ঘাটারচর সংলগ্ন মধু সিটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন তরুণী।  এরপরই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় আবাসন প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মী মাসুম। পরে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন।

হাউজিংয়ের ভেতরে ছবি তোলার সময় ৫-৭ জন মিলে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা ওই তরুণী ও তার সহকর্মীদের কাছ থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তাদের টানাহেঁচড়া করে হাউজিংয়ের আরও ভিতরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে তরুণীর দুই সহকর্মীকে বেদম মারধর করে আটকে রাখে আসামিরা।

এরপর আসামিরা ওই তরুণীকে জোরপূর্বক হাউজিংয়ের উত্তর-দক্ষিণমুখী রাস্তার পূর্ব-পশ্চিম রোডের খালের উত্তর পাশে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে ঘটনা কাউকে জানালে ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

এ ঘটনায় পরদিন সোমবার তরুণী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের চৌকস একটি টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পরে ঘটনার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

ওসি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার অপরাধী। তারা প্রতিনিয়ত চুরি ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াত।

ভুক্তভোগী বলেন, তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। আমি রাজি না হওয়ায় তারা ব্লেড বের করে মুখের সামনে এসে আমাকে ভয় দেখিয়েছে। তখন আমি বাধা দিয়েছি। তারা তখন আমকে বলে আমি যদি রাজি না হই তাহলে আমার সহকর্মীদের মেরে ফেলে দেয়া হবে।  ওই তরুণী জানান, অনেক অনুরোধের পরও মন গলেনি ধর্ষকদের।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবাইকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলা হয় এবং ভিডিও করা হয়। তারপর আমাদের ভয় দেখানো হয়। যদি পুলিশ বা এলাকার কারও কাছে বিষয়টি জানাই তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছেড়ে দেয়া হবে। বাধা দিতে এলে সহকর্মী সিজানকে তারা প্রচুর মারধর করে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। আমি চাই না আমার মত আর কোন মেয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়ুক।  আমি তাদের শাস্তি চাই।’

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন কবির বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে পাঁচজন সরাসরি জড়িত। কিন্তু এদের যারা সহযোগী বা যারা ওখানে আড্ডা দেয় তাদেরকে আমরা শনাক্ত করেছি।  তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলা যাবে না। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ছাড় দেয়া হবে না কাউকেই।’

এদিকে মঙ্গলবার মামলা হলে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামিরা। এমন নির্জন স্থানে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটানোর কথা স্বীকার করেছে আসামিরা। 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর