আশীর্বাদের কাজলা এখন অভিশাপ

জেলা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম  | 2023-08-27 04:01:51

এক সময়ের খরস্রোতা কাজলা আজ দখলের মুখে। স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের আগ্রাসনে অনেক আগেই কাজলা হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। দীর্ঘদিন ধরেই হয়নি পুনঃখনন। ফলে নাব্যতা সংকটে স্থানীয়দের কপালে আশীর্বাদের পরিবর্তে এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক কাজলা নদী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজলার উৎপত্তিস্থল থেকে ভৈরব নদের সংযোগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখলের ছাপ। নদীর পাড় কেটে সমতল জমি তৈরি করেছে দখলকারীরা। খণ্ড খণ্ড অংশে এখন বোরো ধানের চারা দেয়া হয়েছে। আর কিছুদিন পরেই সেখানে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে। শুধু ধান আবাদই নয়, অনেক জায়গায় পুকুর খনন করা হয়েছে।

আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। নদীর যে অংশে সামান্য পানি রয়েছে তাতে কচুরিপানায় ভরা। এসব কারণে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হচ্ছে। মাটি কেটে নদীর পাড় সমতল এবং আবাদি জমিতে রূপান্তরিত করায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাটপাড়া নীলকুঠিতে ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ায় কাজলা নদী নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছে স্থানীয়রা। ইকোপার্কের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নদীর অংশ পুনঃখনন করার ফলে সারা বছরই পানি থাকে। ছোট ছোট নৌকায় পুনঃখননকৃত অংশে চলাচল করে দর্শনার্থীরা। এমনভাবে নদীর পুরো অংশে পুনঃখনন করা গেলে কৃষি ও মৎস্য সম্পদের জন্য বিরাট আশীর্বাদ হবে কাজলা।

সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানান, কাজলা নদী একটি ঐতিহাসিক নদী। এখান দিয়ে কলকাতার সঙ্গে নৌপথের যোগাযোগ ছিল। ইংরেজ বণিকরা এই নদী দিয়ে এদেশে যাতায়াত করত। কাজলা নদীর তীরেই ভাটপাড়া নীল কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এ বিষয়গুলো আজ শুধুই ইতিহাস।



সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বড় নদী হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী। এই মাথাভাঙ্গা নদীর কাজিপুর ইউনিয়নের অংশ থেকে কাজলা নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল থেকে এ নদী হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব এবং সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদীটি গঙ্গার শাখা নদী ভারতের জলঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত।

ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে কাজলা। কিন্তু নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষাকালে নদীর দুই পাড়ের বেশির ভাগ আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় সেচের পানির সংকট।

কাজলা নদী রক্ষার বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ‘পুনঃখনন না হওয়ায় নদীটি মৃতপ্রায়। নদীর প্রাণ ফিরিয়ে এলাকার মানুষের আশীর্বাদে পরিণত করতে পুনঃখনন জরুরি। আমরা পুনঃখননের চেষ্টা করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর