মন্ত্রিসভা নিয়ে নির্ভার আওয়ামী লীগ

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 04:16:10

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার পথচলা শুরু হয়েছে। মন্ত্রিসভায় ব্যাপকমাত্রায় রদবদল করে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারে মন্ত্রিসভা থেকে যেমন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট পুরনো মন্ত্রীরা সড়ে গেছেন ঠিক তেমনি নতুনরাও তাদের জায়গা পূরণ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় এই প্রথমবার মন্ত্রিসভায় শরিকদের কোনো স্থান দেওয়া হয়নি। কিন্তু শরিক দলের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় না রাখায় আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। বরং নতুন মন্ত্রিসভাকে বিভিন্ন মহল থেকে স্বাগত জানানোয় অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন কারা থাকবে না সেটার একক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব সম্পর্কে সবাই অবগত। তাই এবারের মন্ত্রিসভা তিনি যেভাবে গঠন করেছেন তার পেছনেও নিশ্চয়ই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রিসভায় তিনি সঠিক লোকই নির্বাচিত করেছেন। জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে এবং স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করবে। এটা নিয়ে শরিকদের মধ্যেও কোনো অসন্তোষ থাকবে না।

এ দিকে বাদ পড়া হেভিওয়েট মন্ত্রীরা সচিবালয়ে তাদের শেষ কর্মদিবসে নতুনদের প্রতি আস্থা রেখে শুভকামনা জানিয়েছেন। তারা নতুন সরকার থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো ক্ষোভ প্রকাশ না করে বরং নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেকে বিবৃতির মাধ্যমে এবং ফোনে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ঝেঁটিয়ে বিদায় হওয়ার চেয়ে অবসর নেওয়া একদিক দিয়ে ভালো। আমি নিজে বিদায় নিয়ে সেদিক থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রিসভাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বিপুল ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রতি যে আস্থাজ্ঞাপন করেছে, নতুন মন্ত্রিপরিষদের মাধ্যমে সেই আস্থার প্রতিফলন সফলভাবে রূপায়িত হবে। ১০ বছর ধরে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যেভাবে সরকার পরিচালিত হয়েছিল, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নতুনদের জায়গা দিতে হয়। এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম। আমি সৌভাগ্যবান। যারা মন্ত্রী হচ্ছেন তারা সবাই চমৎকার মানুষ, সৎ, পরীক্ষিত এবং দীর্ঘদিনের রাজনীতিক। এটা তাদের প্রাপ্য। বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া টিপু মুনশিকে ‘বিনয়ী মানুষ’ উল্লেখ করে তার সফলতা প্রত্যাশা করেন তোফায়েল আহমেদ।

মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা রয়েছে সে প্রত্যাশা পূরণে আমরা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। এখানে কে মন্ত্রী হয়েছে কে হয়নি এটা বড় বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অল আর ইউনাইটেড, এটাই হচ্ছে বড় কথা।

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় কেউ বাদ গেছে এটি সঠিক না। কারণ আমরা সকলে একটি দল করি, একটি আদর্শের রাজনীতি করি, একজন নেতার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। আমরা একেক সময় একেক জায়গায় আমাদের দায়িত্ব পালন করব। কেউ আজকে মন্ত্রী আছে কালকে থাকবে না, আবার যে আজকে মন্ত্রী নেই কালকে মন্ত্রী হবে। যেহেতু বাংলাদেশ ঐক্য হয়ে গেছে অতএব আওয়ামী লীগেও ঐক্য কিন্তু সুদৃঢ় তৈরি হয়েছে। আমরা যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছি। কেউ দলের মধ্যে কাজ করছে, কেউ সরকারে কাজ করতেছে, কেউ সংসদে কাজ করবে। আমরা প্রত্যেকটা জায়গাই জবাবদিহিতার জায়গায় আনতে চাই।

যে নতুনদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে, তারা ভালো করবে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিদায়ী সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় যেসব তরুণকে নেওয়া হয়েছে, তারা খুবই স্মার্ট ও দক্ষ। আশা করছি, তারা ভালো করবে।’

তবে শরিকদের কেন মন্ত্রণালয় দেওয়া হল না সে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাশেদ খান মেনন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো ব্যাখ্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো সে ব্যাখ্যা আমাদের দেবেন।’

মন্ত্রিত্ব নিয়ে জোটের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন আছে কী না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন নেই। জোট করার অর্থ এই নয় যে, আমরা শর্ত দিয়েছি যে মন্ত্রী করতেই হবে। ১৪ দল আমাদের দুঃসময়ের শরিক। তারা অতীতে ছিলেন ভবিষ্যতে থাকবেন না সে কথা তো আমরা বলতে পারছি না। দায়িত্বের পরিবর্তন ঘটেছে রূপান্তর ঘটেছে বাদ পড়েছে এ কথা ঠিক না। দল এবং মন্ত্রিত্বের আলাদা আলাদা সত্তা আছে। আমি মনে করি না বাদের কোনো ব্যাপার আছে এখানে বাদের কোনো ব্যাপার নেই কাজের রুপান্তর হয়েছে মাত্র।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর