টাকার অভাবে মেডিকেলে পড়া অনিশ্চিত মুবিনের

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 06:36:46

টাকার অভাবে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির বহরপুর ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী কে এম এ মবিন হোসেন মুবিনের।

২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অনিশ্চিত তাঁর লেখাপড়া। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও হতাশ ও দুচিন্তায় রয়েছে মুবিনের পরিবার। প্রতিবেশিদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ভর্তি করালেও কিভাবে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করবেন সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা। অন্ধকারে দিন কাটছে তাদের। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মেধাবী মুবিনের লেখাপড়া।

জানা যায়, মুবিনের বাবা মো: মোক্তার আলী খান একজন দরিদ্র কৃষক। ২০১৬ সালে স্ট্রোক করলে বাম হাতের শক্তি হারিয়ে ফেলে সে। এরপর থেকে আর কোন কাজই করতে পারেনা। দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছে সে। যেটুকু জমি ছিল তা বন্ধুক রেখে এরই মধ্যে নিজের চিকিৎসা, সংসার চালানো ও দুই সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে। এখন তিনি পরিবার নিয়ে বাবার সূত্রে পাওয়া একটা ঘরে বসবাস করছেন কোন রকম।

সন্তানদেরকে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এখন তিনি উল্টো বিপাকে। এই মুহূর্তে বড় ছেলের মেডিকেলে পড়ানোর মতো কোন সামর্থ্যই নেই তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কৃষক বাবার অসুস্থতায় মুবিনের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। টাকার অভাবে মেডিকেলে পড়া এখন অনিশ্চিত তাঁর। মুবিনের একমাত্র ছোট বোন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সেও অত্যন্ত মেধাবী।

মুবিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বালিয়াকান্দি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ ও ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পায়। ফরিদপুরে রেটিনা মেডিকেল কোচিং সেন্টারের বিশেষ বৃত্তি প্রাপ্ত হয়ে মাত্র ৮ হাজার টাকায় ভর্তি হয়ে কোচিং শুরু করে স্বপ্নজয়ের আশায়। এরপর ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৭০.৭৫ নাম্বার পেয়ে মেধা তালিকায় ১৯৮৭ তম স্থান দখল করে নেয় সে।

একান্ত সাক্ষাৎকারে মুবিন বার্তা২৪.কমকে শোনায় তার জীবন সংগ্রামের কথা। সে বলে, দরিদ্র পরিবার থেকে এ পর্যন্ত আসাটা আমার জন্য অনেক কষ্টের। বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। সে কোন কাজই করতে পারেনা। মেডিকেলে ভর্তি হতে এবং পড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা বাবা কিভাবে সংগ্রহ করবেন তা জানিনা। অনেক ধার-দেনা করে বাবা এ পর্যন্ত আমাকে এনেছেন। আমাদের সংসারই যেখানে চলে না সেখানে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন কিভাবে দেখব। ছোট চাচার কিছু টাকা এবং পাড়া-প্রতিবেশির কাছ থেকে ধার করে বাবা আমাকে আপাতত শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু ক্লাস শুরু হলে কি হবে? বই কেনা প্রতি মাসের খরচ কিভাবে জোগাড় হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা।

অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে সে আরো বলে, ইচ্ছে আছে মেডিকেল পড়া শেষ করে একজন আদর্শ চিকিৎসক হয়ে দেশের অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবো।

মুবিনের বাবা মো: মোক্তার আলী খান বলেন, ২০১৬ সালে স্ট্রোক করলে আমার বাম হাতের শক্তি হারিয়ে ফেলি। এরপর থেকে আমি আর কোন কাজই করতে পারিনা। আমার নিজস্ব কোন জমিও নেই। আমার বাবার দেওয়া একটু জায়গায় ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকি। বাবার কাছ থেকে যেটুকু কৃষি জমি পেয়েছিলাম সেই জমিটুকুও অন্যের কাছে বন্দুক রেখে ওদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। ছেলে-মেয়েকে পড়াতে গিয়ে এবং সংসার চালাতে গিয়ে এ পর্যন্ত আমি কয়েক লাখ টাকার দেনা হয়েছি। আমার নামে এখনো কৃষি ব্যাংক, আশা ও ব্র্যাক অফিসে ঋণ রয়েছে। ঋণের কিস্তির টাকা ঠিক মতো দিতে না পারায় অনেক কটু কথাও শুনতে হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। ওর স্বপ্ন একজন আদর্শবান চিকিৎসক হওয়ার। আমি জানিনা ওর স্বপ্ন পূরণ করতে পারব কিনা। মনে হচ্ছে কূলে এসে তরী ডুবে যাচ্ছে। টাকার অভাবে শেষ পর্যন্ত কি আমি একজন ব্যর্থ বাবা হয়ে বেঁচে থাকব। এই সমাজে এমন কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি কি নেই যে আমার সন্তানের পাশে এসে দাঁড়াবে। ওর স্বপ্নপূরণের সারথী হবে।

বালিয়াকান্দি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: কুতুব উদ্দিন মোল্লা বার্তা২৪.কমকে বলেন, মুবিন অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। আমার বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় চেষ্টা করেছি ওকে সহযোগিতা করার। ভাল কোন পৃষ্ঠপোষক পেলে মুবিন একদিন দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে অগ্রণি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মুবিনের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। ও লেখাপড়া যাতে চালিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর