খুলনায় বৈধ অস্ত্র অবৈধ ব্যবহারের আশঙ্কা

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 18:46:44

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর ১৮ দিন। নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা নেবার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না রিটার্নিং অফিসার।  তবে বৈধ অস্ত্রের আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে আশঙ্কা করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

খুলনাঞ্চলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বৈধ অস্ত্রধারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারণা মতে, বৈধ অস্ত্র জমা না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২০০৯ সাল পর্যন্ত খুলনায় এক হাজার ৮৪১টি বৈধ অস্ত্র ছিল, ২০১০ সালে আরও ৮৭ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খুলনায় অস্ত্রের লাইসেন্স নেন আরও ৪০২ জন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮৭টি, ২০১১ সালে ১০২টি, ২০১২ সালে ৪৬টি, ২০১৩ সালে ৭৯টি, ২০১৪ সালে ৪৮টি ও ২০১৫ সালে ৪০ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুসারে, বর্তমানে খুলনায় বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লাইসেন্সপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ সরকারি কর্মকর্তা। অন্যদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতা। এছাড়াও তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী। বিরোধী দল-মতের কয়েকজনেরও লাইসেন্স আছে।

গত ২ ডিসেম্বর থেকে লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন ৭০-৮০টি করে নবায়ন করে এ পর্যন্ত ৬০০ অস্ত্রের নবায়ন করা হয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক এড. কুদরত-ই-খুদা বার্তা২৪কে বলেন, ‘আগে অর্থ-সম্পদ রক্ষার জন্য মানুষকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হতো। এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়ায় অস্ত্র অনেক সময় দুর্বৃত্তদের সংস্পর্শে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় দেখা যায়, অস্ত্রগুলো অবৈধ কাজেও ব্যবহার হতে পারে।’ বৈধ অস্ত্রের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র যাতে ব্যবহৃত না হয় সে জন্য নির্বাচনের আগেই বৈধ অস্ত্র নিয়মানুগভাবে জমা নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন তিনি।

খুলনার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্স মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে। প্রতি বছর ডিসেম্বরে নবায়নের সময় অস্ত্র নিয়ে আসতে হয়। তখন পুলিশ রিপোর্ট দেয়, সবকিছু ঠিক থাকলে নবায়নের পর তাদের আবার অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়। পুলিশ রিপোর্ট খারাপ থাকলে লাইসেন্স নবায়ন করা হয় না। নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো অস্ত্র জমা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশ পাইনি।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রতিটি থানা থেকে অস্ত্র ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়। ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে মামলা আছে কি-না, অস্ত্র কী কাজে ব্যবহার হতে পারেন এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনাটি জেলা প্রশাসন থেকেই আসে।’

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। এছাড়া খুলনা রেঞ্জের পুলিশের অভিযানে ২৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগ উদ্ধার করা হয়েছে সীমান্ত এলাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী ও তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছ থেকে।

জেলা প্রশাসনের জুডিসিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্সের জন্য প্রথমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করতে হয়। এরপর শুনানি হয়। অস্ত্র প্রাপ্তির স্বপক্ষে শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ে সন্তুষ্ট হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একনলা বন্দুক ও শটগানের লাইসেন্স দিতে পারেন। অন্যান্য অস্ত্রের লাইসেন্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর