ক্ষীরার ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

, জাতীয়

সুজন সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিরাজগঞ্জ | 2023-09-01 14:25:10

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জের মাঠে চাষ হয়েছে ক্ষীরার। আবহাওয়া ভালো থাকায় ক্ষীরার বাম্পার ফলনও হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। সিরাজগঞ্জের ক্ষীরার চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন ক্ষীরা যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন আড়ৎগুলোতে। ফলন ভাল হওয়ায় মৌসুমী ক্ষীরার হাট বসেছে প্রায় ১৫টি স্থানে। এবছর জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরার চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশে ৪৩৯, উল্লাপাড়ায় ২০৪, কাজিপুরে ৫, বেলকুচিতে ৫, কামাখন্দে ৪, রায়গঞ্জে, শাহজাদপুরে ১ ও সদরে ৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে তাড়াশ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। অনুরূপ দাম পাওয়া গেলে এক বিঘা জমির ক্ষীরা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিক্রি করা যাবে।

অল্প খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন ক্ষীরা চাষে। ক্ষীরার বড় হাট এখন লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চরবর্দ্ধনগাছা। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষীরা বেচাকেনা চলে। সপ্তাহে ৭ দিনই বসে এই হাট। চাষিরা ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ ক্ষীরা বিক্রি করছেন। বিক্রির জন্য কৃষকদের দিতে হয় না কোনো খাজনা।

জেলার তাড়াশ উপজেলার কোহিত, সড়াবাড়ি, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘুরিয়া, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, তেঁতুলিয়া, ক্ষীরপোতা, বরগ্রাম গ্রামের বিশাল সবুজে সমারোহ মাঠের পর মাঠ ক্ষীরার আবাদ হয়েছে। ক্ষীরার বিক্রি করার জন্য দিঘরীয়া এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে আড়ৎ। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা ক্ষীরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ৎ থেকে জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ক্ষিরা কিনতে আসেন। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন ক্ষীরা বেচা-কেনা হচ্ছে। দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড। পরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক যোগে চলে যায়। এবার এই আড়ৎগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন ক্ষীরা যাচ্ছে ঢাকায়।

ক্ষীরপোতা গ্রামের ক্ষীরা চাষি আব্দুল মতিন বলেন, গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার কারণে খুব একটা লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভাল পেয়েছি।

বারুহাস ইউনিয়নের দিঘড়িয়া গ্রামের বর্গা চাষী ক্ষুদ্র কৃষক ফজর আলী বলেন, গত বছর ১৫ শতাংশ জমির ক্ষীরা বিক্রি করে বেশ লাভ হয়েছিল। এবারও ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ক্ষীরার চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।

সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি তিন বছর ধরে ক্ষীরার চাষ করে আসছি। আগে এই আবাদ কম হতো। কিন্তু অন্যান্য ফসলের চেয়ে ক্ষীরা চাষে অধিক লাভের কারণে প্রতি বছর কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

উল্লাপাড়ার চলনবিল গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, প্রতি বছর আমি ধান ও সরিষা চাষ করি। এবার আড়াই বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে ক্ষীরা ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এ রকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।


এ বিষয়ে আড়ৎদার ফজলুল করিম বলেন, গত বারের তুলনায় এবার ক্ষীরার দ্বিগুণ আমদানি হয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষীরায় আড়ৎ ভরে যায়। চাহিদাও বেড়েছে, দামও ভাল। এক বস্তা ক্ষীরার দাম ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ক্ষীরা জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ক্ষীরা কিনে ট্রাক লোড করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে আসা পাইকার আলতাব ও সোহরাব আলী বলেন, ক্ষীরার প্রচুর আমদানি হয়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। তবুও এক ট্রাক কিনেছি। ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, জেলার ফসলি জমিতে ক্ষীরা চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদের ক্ষীরা চাষে উৎসাহ ও পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর