‘এসডিজি অর্জনে সংসদ সদস্যগণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 10:55:20

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সংসদ সদস্যগণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এসডিজি’র ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে পার্লামেন্টারিয়ানগণও সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ইউএনএফপিএ এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এম্বাসেডর ইব পেটারসেনসহ ইউএনএফপিএ এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সঙ্গে বৈঠককালে স্পিকার এসব কথা বলেন।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বাংলাদেশে পার্লামেন্টারিয়ানগণ জনগণের কল্যাণে অধিক মাত্রায় আত্মনিয়োগ করছেন।

স্পিকার বলেন, সমকালীন বিশ্বে নতুন নতুন সম্ভাবনা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন সমস্যারও উদ্ভব হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, নদী দূষণ, বায়ু দূষণ, কার্বন নিঃসরণসহ নানাবিধ সমস্যা মানুষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য পার্লামেন্টারিয়ানদেরও সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে। এই লক্ষ্যে তাদের জনসম্পৃক্ততা আরও জোরালো করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তারা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন ইস্যুতে পার্লামেন্টারিয়ানদের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে স্পিকার বলেন, স্পিকারের নেতৃত্বে পঁচিশ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ানস অন পপুলেশন এন্ড ডেভলপমেন্ট (বিএপিপিডি) গঠন করা হয়েছে। বিএপিপিডি মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পরিবার পরিবল্পনা, বাল্যবিয়ে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যুব উন্নয়ন ও জনসংখ্যার বহুমাত্রিকতা- এই তিনটি ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করে আসছে। এই সব সমস্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যগণ পর্যালোচনা করে করনীয় নির্ধারণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করছেন।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গৃহীত সুপারিশসমূহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গোচরে আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে সংসদ সদস্যগণ সমস্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করছেন। এতে করে সংসদ সদস্যগণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ ভুক্তভোগীদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছেন। এই সমস্যাগুলো তারা সংসদ অধিবেশনসহ বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছেন।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কোভিড অতিমারির সময়েও বিএপিপিডি ভার্চুয়াল ও সরেজমিন- এই দুই পদ্ধতির সমন্বয় করে এসব আলোচনা পরিচালনা করেছেন। কোভিডকালীন ভুক্তভোগীগণ, বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুগণ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা সংসদ সদস্যগণ জানার সুযোগ পেয়েছেন। বিশেষ করে কন্যাশিশু ও নারীদের সাথে আলোচনায় তাদের মূল সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। এসব আলোচনায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, স্কুল কলেজের ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর বিষয়ে সংসদ সদস্যগণ সম্যক অবহিত হতে পেরেছেন। এসব সমস্যা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য যাতে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী মাসে মাসে সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয় সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

কোভিডের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ভুক্তভোগী জনগণকে সরকার নগদ অর্থ সহায়তা , খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। এসব সহায়তা জনগণের দোরগোড়ায় সহজলভ্য করার কাজে সংসদ সদস্যগণ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

স্পিকার বলেন, বিএপিপিডি’র কার্যক্রম সফল করার জন্য ইউএনএফপিএ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। তিনি এই সহযোগিতার জন্য ইউএনএফপিএ’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি জানান, স্কুল পর্যায়ে বিশেষ করে ছাত্রীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলট ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রমে আরও অধিক মাত্রায় কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন হবে বলে স্পিকার উল্লেখ করেন।

এ ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে ইউএনএফপিএ প্রস্তুত বলে মি. ইব পেটারসেন জানান। পেটারসেন আরও জানান, ইউএনএফপিএ সংসদ সদস্যগণের মাধ্যমে যুব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরও জোরালো কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী। মি. পিটারসেন জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই তা নিরসনে আরও জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। স্পিকার তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, জাতীয় অর্থনীতি তথা জিডিপিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

স্পিকার বলেন, সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যগণ যুব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারেন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের পেছনে ফেলে কোন সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তাই নারীর উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম চলমান আছে। এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এম.এ কামাল বিল্লাহ, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর শাহানারা মনিকা এবং ইউএনএফপিএ’র পক্ষ থেকে রিজিওনাল স্পেশালিস্ট ইসাবেলা জেরালডিন আদজাই উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর