মীর মশাররফের ১৭১তম জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 07:36:54

‘বিষাদ সিন্ধুর’ রচয়িতা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর)।

এ উপলক্ষে কুমারখালীর লাহিনীপাড়ায় মীরের বাস্তুভিটায় মঙ্গলবার ও বুধবার দু’দিন ব্যাপী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন কর্মসূচি।

এর মধ্যে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য কর্মের উপর জ্ঞানগর্ভ, আলোচনা সভা ও তার সাহিত্য নির্ভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ গ্রামীণ মেলা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসব শুরু হবে। প্রথম পর্বে মীরের সাহিত্য ও কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা এবং দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ। সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন।

সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুমারখালীর লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে লাহিনীপাড়ায় তার ঘরবাড়ির আর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে মীরের নিজ হাতে লাগানো একটি মৃত আম গাছের গুঁড়ি স্মৃতি ও কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে ‘মীর মশাররফ হোসেনের জাদুঘরে’। এছাড়াও জাদুঘরে মীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রয়েছে। যা দেখতে দর্শনার্থীরা এখনো প্রতিদিন ছুটে আসে।

এছাড়া এখানে রয়েছে তার প্রথম স্ত্রী আজিজন নেসার কবর এবং মীরের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মীরের ব্যবহৃত আসবাবপত্র রয়েছে তার বাস্তুভিটার পাশেই অবস্থিত ‘মীর মশাররফ হোসেনের জাদুঘরে’।

মীরের জন্মের পর তার ছেলেবেলা কেটেছে লাহিনীপাড়া গ্রামে। তার বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তার মায়ের নাম দৌলতুন্নেসা। মীর মশাররফ প্রথমে জগনমোহন নন্দীর পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি কুমারখালীর এমএন হাই স্কুল, কুষ্টিয়া হাই স্কুল ও রাজবাড়ি জেলার পদমদী হাই স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন।

১৮৬০ সালে মীর মশাররফের মা দৌলতুন্নেসা মারা যান। সে সময় মীরের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এ বয়সেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক প্রায় ৩৫টি বই রচনা করে গেছেন।

এর মধ্যে রত্নাবতী, গৌরী সেতু, বসন্তকুমারী, নাটক জমিদার দর্পণ, সঙ্গীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদীনার গৌরব, বিষাদসিন্ধু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি তিনি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন।

প্রথমে তিনি কাঙাল হরিণাথ মজুমদারের সাপ্তাহিক ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা ও কবি ঈশ্বরগুপ্তের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন। এরপর ১৮৮০ সালে তিনি লাহিনীপাড়া ‘হিতকরী’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।

মীর মশাররফ হোসেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় কলকাতায় তার বাবার বন্ধু নাদির হোসেনের বাড়িতে থেকে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। এখানে থাকাকালে নাদির হোসেনের বড় মেয়ে লতিফুন নেছার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরে বিয়ে ঠিক করা হয়। কিন্তু নাদির হোসেন বিয়ের সময় বড় মেয়ের পরিবর্তে মেজ মেয়ে আজিজন নেছার সঙ্গে মীরের বিয়ে দেন।

এ ঘটনার পর লতিফুন নেছা আত্মহত্যা করেন। প্রথম বিয়ে সুখের না হওয়ায় মীর মশাররফ ৮ বছর পর কুমারখালীর সাঁওতা গ্রামের বিধবা কুলসুম বিবিকে বিয়ে করেন। ফলে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার দূরত্ব আরও বাড়ে। এরপর তিনি স্ত্রী কুলসুম বিবিকে নিয়ে লাহিনীপাড়া ছেড়ে টাঙ্গাইলে চলে যান এবং সেখানে বসবাস করতে থাকেন। প্রথম স্ত্রী আজিজন নেছা কয়েক বছর নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করার পর লাহিনীপাড়ায় মারা যান এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। মীরের প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান ছিল না। তবে দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুমের ঘরে তার ৫ ছেলে ও ৬ মেয়ে ছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর