আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়

বিবিধ, জাতীয়

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 21:19:13

প্রতিদিনই ভেজালযুক্ত খাবার খেয়ে অভ্যস্ত হচ্ছি আমরা। ভেজাল খাবার পরিহার করার কোন উপায় নেই আমাদের কাছে। খাদ্য উৎপাদনের শুরু থেকে প্রতি ধাপেই তাতে মিশে যাচ্ছে ভেজাল সামগ্রী। এতে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা জড়িয়ে পড়ছে এ ভেজাল মেশানোর কাজে।

‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মই গড়বে ২০৩০ এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়শন বাংলাদেশ (ক্যাব) ও খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসটি প্রতি বছর পালিত হলেও খাদ্য ভেজালমুক্ত করণে কোন অভিযান বা জনসচেতনতামুলক কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।

জানা গেছে, মানবদেহে রোগ-ব্যাধির প্রায় ৮০ শতাংশ হয় অনিরাপদ খাদ্য ও পানির কারণে। পানীয় জল থেকে শুরু করে শিল্পোৎপাদিত খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ঔষধ কিছুই এখন আর ভেজালমুক্ত নয়। নগরীর বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গাঁও-গেরামের ক্ষুদ্র দুধ-বিক্রেতাসহ সব ব্যবসায়ীই এখন ভেজাল-অপরাধের সাথে কমবেশি সম্পৃক্ত।

মাছ ব্যবসায়ী ফরমালিন মিশ্রিত মাছ বিক্রি করে সেই পয়সা দিয়ে কেনে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা ইথোফেন। ফল পাকানো হয় কেমিক্যাল দিয়ে; মাছে দেওয়া হয় ফরমালিন; মুরগি পালিত হয় ক্রোমিয়ামযুক্ত ট্যানারি-বর্জ্যের বিষাক্ত খাবারে। দেদারছে এমন সব পণ্যেরও ব্যবসা চলছে, যেগুলো বিএসটিআই’র তালিকাতেই নেই।

পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, ড্রাইকেকসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে পঁচা ডিম দিয়ে। দেশব্যাপী মুরগির খামারের সাথে বিভিন্ন নামিদামি বেকারির যোগাযোগ রয়েছে। এসব খামার থেকে মাত্র ১ টাকায় পঁচা ডিম কিনে নেয় বেকারিগুলো। 

বিদেশি ফলের মধ্যে কী পরীক্ষা ফরমালিন রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রামের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের রসায়নবিদ ইলিয়াস জাহেদী বার্তা২৪কে বলেন, ‘কালো আঙ্গুরে অধিক পরিমাণে ফরমালিন রয়েছে। মাল্টা, কমলা আমের মধ্যে ইথিলিন ও কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’

অবসরপ্রাপ্ত বিএসটিআই কর্মকর্তা রেজাউল করিম বার্তা২৪কে বলেন, ‘দেশে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার গুঁড়া মসলা বিক্রি হয়। অতি মুনাফার লোভে গুঁড়া মসলায় মেশানো হয় নিম্নমানের কাঁচামাল, ইট-কাঠ-ভুট্টা ও চালের গুঁড়াসহ ক্রোমাটেড, মেটালিন ইয়েলো, টেক্সটাইল ডাই পিউরি, পেপরিকা, ফিটকিরি জাতীয় ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ; এসব ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস হয় না আগুনের তাপেও।‘

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বার্তা২৪কে বলেন, ‘ভেজাল, অবৈধ ও নকল খাদ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার সয়লাব হয়েছে। পবিত্র পেশাকে অনেকে অতি মুনাফার আশায় অপবিত্র করে মানুষের ক্ষতি করছে।’

বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক সাজ্জাতুল বারি বার্তা২৪কে বলেন, ‘ভেজাল থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। ভেজাল পণ্য ও কোম্পানিকে এড়িয়ে চলতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট তাই সব সময় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।’

চট্টগ্রামের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার সূত্র জানায়, ট্যানারি-বর্জ্যের খাদ্য খাইয়ে মোটা-তাজা করা মুরগির মাংসেই মানব দেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৩৬ গুণ বেশি ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। মানুষের শরীরে প্রতি গ্রাম রক্তে শূন্য দশমিক দুই মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত জৈবযৌগ সহনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের শরীরে তা বহু গুণ বেশি রয়েছে।

মূলত দূষিত খাবার ও পানীয় গ্রহণের কারণেই শরীরে জমা হচ্ছে এ বিষ। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল, ক্ষতিকারক রাসায়নিক বস্তুর মিশ্রণে তৈরি মসলা, জুস ও পশুখাদ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করছে মানুষ। প্রতিনিয়ত নিম্নমানের ও ভেজালযুক্ত এসব খাবার মানুষের দেহে বিষ আকারে জমাট বাঁধছে; পেটে ঢুকে পড়ছে ঘাতক জীবাণু হেলিকোব্যাক্টর পাইলরি। এ ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিকভাবে মানুষের পাকস্থলীতে বাসা বেঁধে সেখানে ঘা তৈরি করে; তারপর পাকস্থলীর গা ছিদ্র করে ছড়িয়ে পড়ে পেটজুড়ে। একপর্যায়ে রূপ নেয় ক্যান্সারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর