নিরপেক্ষদের ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা’ নিয়োগের পরিকল্পনা ইসির

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:50:38

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের আগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে প্রায় দেড় লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোটের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে ইসি।

কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনের সময় পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আনা হয়। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে এটি সম্ভব নয়। কারণ এই নির্বাচনে একসঙ্গে তিনশটি আসনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে সংসদ নির্বাচনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক অফিসার, সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও ইতোপূর্বে যারা প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছে এবং যারা নিরপেক্ষ ব্যক্তি, যাদের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ নেই তাদেরকেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে কমিশন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সরকারের উপ-সচিব পদ মর্যদার কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের বিধান রয়েছে। আর অন্যদের প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী কর্মকর্তা ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন মনে করলে শুধু সরকারিই নয়, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককেই নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যেহেতু তিনশ আসনে নির্বাচন হবে তখন আমাদের অনেক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে। সে জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা, প্রাইমারি ও হাই স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিসসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়াও ইতোপূর্বে যারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যারা নিরপেক্ষ ব্যক্তি, যাদের বিরুদ্ধে কোনো দলীয় তকমা লেগেছে, এমন কোনো অভিযোগ নাই, স্বাভাবিকভাবেই আমরা তাদেরকেই সঠিক ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করব।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘সচিব কী বলছেন, সেটা আমি জানি না। এখন এগুলো তো কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হবে, কী হবে না হবে। এ বিষয়ে এখনো কমিশন সভা হয়নি, সিদ্ধান্তও হয়নি। সচিব সাহেব বলছেন, তা হয়তো তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল অনুযায়ী, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুসারে, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ও দুজন পোলিং অফিসার নিয়োগ করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে অতিরিক্ত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। তা ছাড়া প্রতি জেলায় বা নির্বাচনি এলাকায় রিটার্নিং অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল সংগ্রহ এবং নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অধিকসংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রয়োজন হতে পারে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিস্তারিত তথ্যসহ নামের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সব নির্বাচনেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার একাধিক তালিকা প্রণয়ন করে থাকে। এবারও তাই করা হচ্ছে। কেননা, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে অনেককেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্যদের নিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নামের তালিকা পাঠাতে শুরু করেছে। প্যানেল তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারণ হবে ভোটের আগে। এরমধ্যেই ওই সব কর্মকর্তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেওয়া হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে উল্লেখ করা আছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার বিধি-বিধান তুলে ধরা হয়েছে। বিধানটিতে বলা হয়েছে-

(১) প্রিসাইডিং অফিসার: (ক) সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; (খ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ/সমমানের মাদরাসার শিক্ষক, ক্ষেত্র বিশেষে ডেমনস্ট্রেটর/কর্মকর্তা; (গ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বীমা, করপোরেশন অথবা অনুরূপ কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; (ঘ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়/সমমানের মাদরাসার প্রধান শিক্ষক/সহকারি প্রধান শিক্ষক, ক্ষেত্র বিশেষে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এবং (ঙ) প্রয়োজনবোধে বেসরকারি ব্যাংক, বিমা অথবা নির্ভরযোগ্য যেকোনো বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠানের উক্তরূপ কর্মকর্তা/কলেজ শিক্ষক/প্রধান শিক্ষক/সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা।

(২) সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার: (ক) সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; (খ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ/সমমানের মাদরাসা ডেমনস্ট্রেটর/কর্মকর্তা; (গ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিমা, করপোরেশন অথবা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; (ঘ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়/সমমানের মাদরাসার প্রধান শিক্ষক/সহকারী প্রধান শিক্ষক/জ্যেষ্ঠ শিক্ষক/শিক্ষক এবং (ঙ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়/রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

(৩) পোলিং অফিসার: (ক) সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী; (খ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ/সমমানের মাদরাসার কর্মচারী; (গ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিমা, করপোরেশন অথবা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী; (ঘ) সরকারি/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়/মাধ্যমিক বিদ্যালয়/সমমানের মাদরাসার শিক্ষক/কর্মচারী; (ঙ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়/রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং (ঙ) প্রয়োজনবোধে বেসরকারি ব্যাংক, বিমা অথবা নির্ভরযোগ্য যেকোনো বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠানের উক্তরূপ কর্মকর্তা/কলেজ শিক্ষক/প্রধান শিক্ষক/সহকারি প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর