নাশকতা মামলায় মৃত ব্যক্তিরাও আসামি

খুলনা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:18:10

কুষ্টিয়া: মো. কায়েম শেখ। কুমারখালী উপজেলার ভাড়রা গ্রামের বাটুন শেখের ছেলে। ২০০৬ সালে মারা গেছেন। কিন্তু কুমারখালী থানায় গত ২১ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত নাশকতা মামলার ৪১নং আসামি হয়েছেন তিনি।

একই উপজেলার কৃষকদলের সদস্য সচিব প্রফেসর হারুন-অর রশিদ। হারুন-অর রশিদ অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে প্রায় দেড় মাস আগে ভারতের ভেলোরে গেছেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন। গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর কুমারখালী থানায় নাশকতার মামলায় ৫৪নং আসামি করা হয়েছে তাকে। যার মামলা নং ৩০।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় গত ২৫ দিনে ২৮টি নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। জেলার সাত থানায় দায়ের করা এসব মামলায় আসামি হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

মৃত কায়েম শেখ ও প্রফেসর হারুন-অর রশিদের মতো আসামির তালিকায় রয়েছে হজে থাকা ব্যক্তিরাও। আসামি হয়েছেন একাধিক বিএনপি নেতা। আবার অনেক আগে থেকে জেলে আছেন এমন ২ জন কর্মীকে আসামি করেছে পুলিশ।

একইভাবে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরব আলীকে আসামি করা হয়েছে। অথচ ৬ মাস আগে তিনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আরব আলী হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের পদ্মনগর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ইবি থানার ১২নং নাশকতা মামলার ৩ নাম্বার আসামি হয়েছেন মৃত আরব আলী।

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজা। গত ২০ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় দায়েরকৃত নাশকতা মামলার ১৮ নং আসামি হয়েছেন এই নেতা। যার মামলা নাম্বার-৪১। অথচ ওই সময় তিনি ভারতে একটি জটিল অপারেশন করে বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

ভেড়ামারা পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। ৩১ আগস্ট ভেড়ামারা থানায় নাশকতা মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। অথচ ওই সময় তিনি হজ পালনে সৌদি আরব ছিলেন।

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির ২ কর্মী শিপন ও জাপান জেলে রয়েছেন। জেলে থাকা অবস্থায় নতুন করে তাদের নামে নাশকতার মামলা দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপি কর্মী ইয়াকুর আলী দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া আছেন। তার নামেও পুলিশ মামলা দিয়েছে।

গত ৩১ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলার ৭ থানায় এ ধরনের ২৮টি নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খোকসা-কুমারখালী থানায় ৯টি মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি হয়েছেন ৪২৮ জন। এদের মধ্যে পুলিশ ৬২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

কুষ্টিয়া মডেল ও ইবি থানায় হয়েছে ১০টি মামলা। এই দুই থানায় মামলার আসামি হয়েছেন ৩৬২ জন। আটক করা হয়েছে ৯৫ জনকে। দৌলতপুরে ৫টি নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। এই ৫ মামলায় আসামি আছেন ২০০ জন। আটক করা হয়েছে ২৮ জনকে এবং মিরপুর-ভেড়ামারায় ৫টি মামলা হয়েছে। ওই সকল মামলায় আসামি হয়েছেন ১৬৫ জন। পুলিশ ১৭ জনকে আটক করেছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বার্তা২৪.কমকে জানান, কাল্পনিক এসব মামলার এজাহার অনেকটা একই রকম। শুধু মামলায় আসামির নাম ও স্থান আলাদা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, জেলাজুড়ে গণ গ্রেফতার চলছে। মামলা পর মামলা দিয়ে শত শত নেতাকর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। প্রতি রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। এভাবে মামলা ও গণগ্রেফতার করে বিএনপিকে দমানো যাবে না।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়ার সময় বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছিল। তাদের স্বীকারোক্তিতে এজাহারে অনেকের নাম এসেছে। তবে যদি মৃত বা দেশে নেই এমন কোনো ব্যক্তির নাম এজাহারে থাকে, তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর