দীর্ঘায়ু পেতে এড়াতে হবে ৮ খাবার

পরামর্শ, লাইফস্টাইল

লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:02:31

সকলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে, পছন্দের খাওয়ার প্রতি অতি আগ্রহের প্রবণতা।

কিন্তু খাবার যতই পছন্দের, যতই সুস্বাদু, তার ক্ষতির মাত্রাও যেন তত বেশি। সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কোন বিকল্প নেই একদম। তাই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে যত্নশীল হতে হবে।

সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু পেতে উপকারী খাবারের উপর অনীহা না এনে ঠিকমতো পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য খেতে হবে। একইসাথে মনে রাখতে হবে, অতিমাত্রায়  যে কোনো খাদ্য উপাদান গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জেনে নিন কোন ৮টি খাবার ক্ষতি করছে আপনার।

১. প্রক্রিয়াজাত মাংস

এ ধরনের মাংসকে শুকিয়ে, লবণ ও নাইট্রিক এসিড দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়। যেমন: সসেজ, বেকন, টিনজাত বা ধূমায়িত মাংস ইত্যাদি। ২০১৩ সালে বাইয়োমেড সেন্ট্রাল এর গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, যারা নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার ক্যান্সার, ও হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুমুখে ঢলে পরেন। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত মাংসে অতিরিক্ত লবণ থাকে, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিসের সম্ভবনা তৈরি হয়।

২. কোমল পানীয়

কোমল পানীয়তে ৪৪ শতাংশের মতো চিনি থাকে। এই তরল পানে আয়ু কমে যাওয়ার মতো বিষয় না ঘটলেও, নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাড় ক্ষয়, ওজন বৃদ্ধি। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত কোমল পানীয় পানে শরীরের স্থুলতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে শিশুদের। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।

৩. তেলে ভাজা খাবার

প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া হয়। ক্লাসের বিরতিতে বা ক্লাস শেষে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভাজাপোড়া খাবার খেতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। বর্তমানে বেশিরভাগ খাওয়াই তেলে ভাজা হয়। আলুর চিপস, পেঁয়াজের রিং, চিকেন ফ্রাই, চপ, বুট ভাজা ইত্যাদি। স্বাদু এই খাবারগুলো প্রিয় হলেও ধমনীর জন্য দারুণ ক্ষতিকর। এগুলো অতিমাত্রায় তেল ও ফ্যাট থাকে। ফলে কোলেস্টেরল জমে ধমনী বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৪ সালে অ্যামেরিকা সোসাইটির নিউট্রিশন জার্নাল গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে, ঘন ঘন তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ অতিরিক্ত হলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই বেশি পরিমান ভাজাপোড়া পরিহার করতে হবে।

৪. ইন্সট্যান্ট নুডলস

সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে অনেকেই রান্না করতে আগ্রহী হন না। আবার শরীরেও তেমন একটা শক্তি থাকেনা। তাই ক্ষুধা মিটাতে বেছে নেওয়া হয় ইন্সট্যান্ট নুডলস। কিন্তু বেশিদিন বেঁচে থাকতে চাইলে এটি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে একদম। কারণ এটি প্রিজারভ করা হয়, কৃত্তিম রং ও ফ্লেভার দেওয়া হয় এবং বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এসব মিশ্রিত অবস্থায় মাসের পর মাস প্যাকেটজাত অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে ইন্সট্যান্ট নুডলস। পাশপাশি এই খাদ্য উপাদানটি অতিমাত্রায় ক্যালরিযুক্ত ও সম্পূর্ণ পুষ্টিহীন। তাই স্বাস্থ্যের উপর এই নুডলস নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে দেয়।

৫. আইসক্রিম

আইসক্রিমের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। ভাবনা শুরু হয়ে যায়, কোন ফ্লেভারের আইসক্রিম খাওয়া যায়। কিন্তু প্রিয় এই খাবারটি কি ক্ষতিকর? উত্তরট হচ্ছে হ্যাঁ, কারণ এটি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় অনেক ধরণের স্বাদের রং, অতিমাত্রায় চিনি, ক্রিম বানাতে অধিক ফ্যাটের দুধ। এতে যে পরিমাণ দুধ ব্যবহার করা হয় তার জন্য কোলেস্টেরল ও চর্বি বেড়ে যায় অনেকখানি। ফলে ধমনীগুলো সরু হয়ে আসে ও হৃদরোগ দেখা দেয়। তাই শরীরের প্রতি যত্ন নিতে একেবারেই স্বল্পমাত্রায় আইসক্রিম খেতে হবে।

৬. ফ্রুট জুস

ফ্রুট জুসকে স্বাস্থ্যকর বলা হয়। কিন্তু সত্যটি হচ্ছে, তা আদতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। প্যাকেট বা বোতলে পাস্তুরিত কিছু জুস রয়েছে যেগুলোতে লেখা থাকে ১০০% ফল থেকে তৈরি, যা আসলে কখনোই সত্য হয় না। বরং এতে রং, ফ্লেভারে, অতিমাত্রায় চিনি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এগুলো যখন প্যাকেট করা হয় তখন অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে, ফলে দীর্ঘদিন থাকলে জুসের স্বাদ হারিয়ে যায় এবং নষ্টও হয়ে যায়। অধিক মাত্রায় চিনি দেওয়ায় এতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।

৭. পিনাট বাটার

পাউরুটি বা কুকিজের সাথে পিনাট বাটার খাওয়া হয়। এর স্বাদ মিষ্টি করে তৈরি করা হয়, যেন এটা খেতে সবাই পছন্দ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টি স্বাদের জন্য চিনি মেশানো হয় এতে। আর এই চিনির ফলে শরীরে স্থুলতা বৃদ্ধি পায়, ওজন বেড়ে যায়। পিনাট বাটারের কিছু ফ্যাট উপকারী হলেও, সব ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই পিনাট বাটার খেলেও তা অধিক পরিমাণ ও নিয়মিত না খাওয়াই ভালো।

৮. ফ্রোজেন খাদ্য

অনেকেই ফ্রোজেন খাবার খান নিয়মিত। সময় কম থাকায় বা চটজলদি নাশতার জন্য ফ্রোজেন খাওয়া কিনে থাকেন। তবে সমস্যা খাওয়া ফ্রোজেন করে রাখাতে না। সমস্যা হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার সংরক্ষণে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাতে। এছাড়াও এতে রয়েছে অধিক সোডিয়াম ও কৃত্তিম ফ্লেভারের রং। এছাড়া এতে ভেজিটেবিল অয়েল দেয়া হয়, যাতে প্রচুর ফ্যাটি এসিড রয়েছে। সবকিছু মিলে শরীরে ডায়বেটিস ও হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব তৈরি করে ফ্রোজেন খাবার।

আরও পড়ুন: খাবার তেলে ভাজার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো আপনিও করেন!

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে অস্বাস্থ্যকর খাবারে বাড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

এ সম্পর্কিত আরও খবর