ওয়ার্ল্ড ডায়বেটিস ডে: প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

স্বাস্থ্য, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-08-24 19:31:51

অন্যতম কমন শারীরিক সমস্যার মাঝে ডায়বেটিস প্রথম দিকেই থাকবে।

মূলত ডায়বেটিস হলো ‘মেটাবলিক ডিসঅর্ডার’ যার ফলে রক্তে চিনির মাত্রা অনিয়ন্ত্রত হয়ে যায়। শরীরে ইনস্যুলিন ইনসেন্সেটিভ অথবা শরীরে ইনস্যুলিনের প্রোডাকশন কমে গেলেই ডায়বেটিসের সমস্যাটি দেখা দেয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, ডায়বেটিস দুই প্রকারের হয়। প্রথমটি হলো টাইপ-১ ডায়বেটিস, যা নিরাময়যোগ্য নয়। দ্বিতীয়টি হলো টাইপ-২ ডায়বেটিস, যা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে সহজেই নিরাময়যোগ্য।

পুরো পৃথিবী জুড়ে ডায়বেটিসের বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে ইন্টারন্যাশনাল ডায়বেটিস ফেডারেশন (IDF) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৯১ সালের ১৪ নভেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড ডায়বেটিস ডে’ গড়ে তোলে।

ডায়বেটিস হবার কারণ কী?

জন্ম থেকেই শরীরে ডায়বেটিসের সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে টাইপ-১ ডায়বেটিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে টাইপ-২ ডায়বেটিস হবার নানাবিধ কারণ রয়েছে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো-

১. বংশগত কারণ।

২. বয়স।

৩. ওবেসিটি বা বাড়তি ওজন।

৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস।

৫. শরীরচর্চার অভাব ও

৬. হরমোনের সমস্যা।

ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো কী?

হুট করেই ডায়বেটিসের প্রভাব দেখা দিতে পারে শরীরে। শারীরিক এই সমস্যাটির লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন নন অনেকেই। ফলে দেরীতে ডায়বেটিস ধরা পড়ে। ডায়বেটিসের একেবারেই প্রথমিক কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো।

১. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।

২. ক্ষত ভালো হতে প্রয়োজনের চাইতে বেশি সময় লাগা।

৩. ইষ্ট ইনফেকশন হওয়া।

৪. ঘনঘন মাথা হালকাবোধ হওয়া।

৫. ঘনঘন মুড পরিবর্তিত হওয়া।

কীভাবে ডায়বেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব?

ডায়বেটিসকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ ও বলা হয়ে থাকে। কারণ সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে খুব সহজেই এই রোগটিকে দূরে রাখা সম্ভব ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়বেটিস প্রতিরোধে যে নিয়মগুলো নিজের আয়ত্তে আনা প্রয়োজন সেগুলো জেনে রাখুন।

শরীরচর্চা

প্রতিদিনের নানাবিধা কাজের মাঝে তিরিশ মিনিট বরাদ্দ রাখুন শরিরচর্চা কিংবা হাঁটার জন্য। শরীরকে একটিভ রাখার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এমনকি শরীরে ইনস্যুলিনের সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি পায় শরীরচর্চার ফলে। এছাড়া শরীরচর্চার ফলে এন্ড্রোফিন হরমোনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়, যা আনন্দে থাকতে সাহায্য করে ও ডিপ্রেশনকে দূরে রাখে।

দানাদার খাদ্য গ্রহণ

দানাদার কিংবা হোল গ্রেইন খাবারে থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যা রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি করে খুব ধীরে। যেখানে সিম্পল কার্বোহাইড্রেট হুট করেই রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে রিফাইন্ড গ্রেইন (সাদা ভাত) গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ

টাইপ-২ ডায়বেটিস এড়াতে চাইলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে। আঁশ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে না। এছাড়া আঁশযুক্ত খাবার পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। ফলে পেট ভরা থাকে এবং ঘনঘন ক্ষুধাভাব দেখা দেয় না।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

বাড়তি ওজন সবসময়ই ডায়বেটিসের আশঙ্কা বহন করে। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ও ডায়বেটিসমুক্ত থাকতে চাইলে অবশ্যই ওজনকে নিয়ন্ত্রণের মাপকাঠিতে আনতে হবে।

চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে যাওয়া

মাত্র ১২ আউন্স পরিমাণ বোতলজাত কোমল পানীয়তে থাকে ১০ চা চামচ চিনি। কোমলপানীয় পানের ফলে রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া ও হৃদরোগ পাওয়ার মতো সমস্যাগুলোও দেখা দেয়।

মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা

অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক চাপের ফলে রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এইনেফ্রিন ও কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি করে এনার্জি বৃদ্ধির জন্য। যে কারণে যথাসম্ভব স্ট্রেস ফ্রি জীবনযাপন করার চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন: ওয়ার্ল্ড অস্টিওপরোসিস ডে: হাড় থাকুক মজবুত

আরো পড়ুন: অ্যাসিডিটির সমস্যা: কারণ ও পরিত্রাণের উপায়

এ সম্পর্কিত আরও খবর