জেনে নিন তারাবির নামাজের মাসয়ালা

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:47:06

রমজান মাসে এশার নামাজের পর ২০ রাকাত অতিরিক্ত নামাজকে তারাবির নামাজ বলে। এ নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। রমজান মাসে রোজাদারদের কর্তব্য হলো- গুরুত্ব দিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করা।

তারাবির মাসায়ালা
মাসয়ালা: বিশ রাকাত তারাবির নামাজ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরষ-মহিলা সবার ওপর সুন্নতে মোয়াক্কাদা। অসুস্থ ও রুগীর ওপর তারাবি জরুরি নয়, তবে কোনো কষ্ট না হলে তাদেরও পড়া মুস্তাহাব। -রদ্দুল মুহতার: ১/৭৪২

মাসয়ালা: তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করা মুস্তাহাব, একাকি আদায় করলেও আদায় হবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৯০

মাসয়ালা: কারও যদি তারাবির জামাত থেকে কিছু রাকাত ছুটে যায় তাহলে বেতরের নামাজের পর তা আদায় করে নেবে।- রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪

মাসয়ালা: নাবালেগ হাফেজের পেছনে বালেগ পুরুষ-মহিলা কারও জন্যই ইক্তিদা করা বৈধ নয়। -আল বাহরুর রায়েক: ১/৩৫৯

খতমে কোরআন সম্পর্কিত মাসয়ালা
মাসয়ালা: ফরজ, নফল বা তারাবি যে নামাজেই প্রত্যেক সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ নিঃসন্দেহে পড়া সুন্নত। তবে বিসমিল্লাহ নিঃশব্দে পড়া সুন্নত। তাই তারাবির নামাজেও খতমে কোরআনের সময় প্রত্যেক সূরার শুরুতে নিঃশব্দে পড়া সুন্নত। তবে যেহেতু বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিমও কোরআনের একটি আয়াত; তাই মুসল্লিদের খতম পূর্ণ হওয়ার জন্য যেকোনো সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ স্বশব্দে পড়ে নিলে সবার খতম পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রতি সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ স্বশব্দে পড়লেও কোনো সমস্যা নেই। উভয়ের ওপর আমল করার অবকাশ আছে। -রদ্দুল মুহতার: ১/৪৯০

মাসয়ালা: ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে নামাজের ভেতর লোকমা (নামাজের কেরাতে কোথাও ইমামের সন্দেহ হলে এবং সামনে অগ্রসর হতে না পারলে মুক্তাদির তাকে সহযোগিতা করা উত্তম। সহযোগিতার পদ্ধতি হলো, মুক্তাদি উচ্চস্বরে শুদ্ধভাবে পাঠ করবেন। এটাকে পরিভাষায় ‘লোকমা দেওয়া’ বলে। অনেক সময় কেরাত ছাড়াও উঠা-বসার ক্ষেত্রে কোথাও ইমামের ভুল হলে তাকে সতর্ক করাকেও লোকমা দেওয়া বলে। ইসলামে লোকমা দেওয়া ও নেওয়ার বিধান রয়েছে। যেগুলো জানা ও মেনে চলা অপরিহার্য) দেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা উচিত এবং ইমাম সাহেবের জন্য লোকমার অপেক্ষা না করে অন্য আয়াত পড়ে নামাজ শেষ করা উচিত। লোকমা দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো- প্রথমে ইমাম সাহেবকে আয়াত পুনরাবৃত্তির সুযোগ দেওয়া। এতদসত্ত্বেও ইমাম সাহেব শুধরে নিতে না পারলে সেক্ষেত্রে মুক্তাদি লোকমা দিলে কোনো ক্ষতি হবে না। তারাবি নামাজে খতমে কোরআনে যদি হাফেজ সাহেব লোকমার অপেক্ষা না করে, তাহলে লোকমা না দিলে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে ভুলে যাওয়া আয়াত পরবর্তীতে সূরা ফাতেহার পর পড়ে নিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ১/৬২৩

তারাবির নামাজে ভুল করলে
মাসয়ালা: তারাবির নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে তৃতীয় রাকাতে সিজদা করার পূর্বে স্মরণ হলে বসে তাশাহহুদ ও সেজদায়ে সাহু আদায় করলে তেলাওয়াত ও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদি তৃতীয় রাকাতে সিজদা করে ফেলে, তবে চতুর্থ রাকাত মিলিয়ে নেবে। এতে শেষের দুই রাকাত তারাবির নামাজ হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং শেষ বৈঠক না করার কারণে প্রথম দুই রাকাত তারাবি হিসেবে গণ্য না হওয়ায় তেলাওয়াতসহ পুনরায় পড়তে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৮৯

মাসয়ালা: যদি কোনো ব্যক্তি তারাবির নামাজ চার রাকাতের নিয়ত করে শুরু করে এবং ভুলে দুই রাকাতের পর বৈঠক না করে চার রাকাত শেষ করেই বৈঠক করে, তাহলে সে যদি নামাজ শেষে সেজদায়ে সাহু করে থাকে, তবে শুধু শেষের দুই রাকাত তারাবি হিসেবে গণ্য হবে। -আল বাহরুর রায়েক: ২/১১৭

বসে তারাবির নামাজ
মাসয়ালা: মাটিতে বসে রুকু-সেজদার মাধ্যমে তারাবি নামাজ বৈধ। অনুরূপ তারাবির কেরাতের সময় চেয়ারে বসে রুকু-সেজদা নামাজের নিয়মমাফিক আদায় করলে তাও বৈধ। কিন্তু বিনা ওজরে এরূপ করলে নামাজের পূর্ণ সওয়াব পাবে না, বরং অর্ধেক সওয়াব পাবে। তবে হ্যাঁ, নিয়মমাফিক রুকু সেজদায় সক্ষম ব্যক্তি চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু সেজদার মাধ্যমে নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১১৮

এ সম্পর্কিত আরও খবর