‘চিন্তা করো না, আমরা শক্ত আছি…’

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 07:39:05

এক চিঠিতে লেখা ‘চিন্তার কিছু নেই....আমরা সবাই শক্ত আছি।’অন্য চিঠিতে লেখা, টিচাররা যেন আমাদের আর বেশি বেশি হোম ওয়ার্ক না দেয়’। কেউবা ফ্রাইড চিকেন খাওয়ার আকুতির কথা জানিয়েছে। অনেকেই তাদের বাবা-মাকে জানিয়েছে ভালোবাসার কথা।

শনিবার (৭ জুলাই) সন্তানদের হাতে লেখা চিঠি নিয়ে থাই নেভি সিলের সদস্যরা গুহা থেকে বেরিয়ে এলে ভারী হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিবেশ। দুই সপ্তাহ হল প্রিয় সন্তানদের দেখতে পান না বাবা-মা। আবেগাপ্লুত অভিভাবকেরা তাই সন্তানের চিঠি জড়িয়ে চোখের পানি মুছতে থাকেন।

বাব-মা উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে তাদের দু:শ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং  গুহায় ভেতরে আটকে থাকা ১২ কিশোর। চিঠিগুলোতে কেউ ফ্রাইড চিকেন খেতে চেয়েছেন, কেউ জন্মদিন উদযাপনের পরিকল্পনা শেয়ার করেছেন, কেউ নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন, ভালো আছেন থাই ফুটবলাররা, দেওয়া হয়েছে এনার্জি জেল


গুহায় আটকে থাকা মিক নামের এক কিশোর জানায়, মা, খালা দাদি, বাবা ও ভাই সবাইকে মিস করছি খুব। তোমাদেরকে খুব ভালোবাসি। আমি এখানে ভালো আছি। নাবিকেরা আমার খুব ভালো খেয়াল রাখছে। খুব ভালোবাসি’।

ডম নামে অপর এক কিশোর লিখেছে, আমি ভালো আছি তবে এখানকার আবাহওয়া খুব ঠাণ্ডা। চিন্তা করার দরকার নেই। আর হ্যাঁ, আমার জন্মদিনের কথা যেন ভুলে যেও না ‘ ৩ জুলাই ডমের জন্মদিন ছিল।

খুদে ফুটবলার আদুল লিখেছে, আমাদের জন্য দু:শ্চিন্তার দরকার নেই। সবাইকে মিস করছি। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে খুব।’

নাইট লিখেছে, নাইট বাবা-মাকে খুব ভালোবাসে। নাইটের জন্য তোমাদের আর ভাবতে হবে না। নাইট সবাইকে ভালোবাসে।’ 


আরও পড়ুন, অক্সিজেন দিতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবেই নৌ ডুবুরির মৃত্যু  


কিশোর ফুটবল দলটির কোচ ভিন্ন একটি চিঠিতে আটকে পড়া কিশোরদের অভিভাবকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২৫ বছর বয়সী কোচ এক্কাপল চান্টাওয়াং অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, প্রিয় অভিভাবকরা, আমরা এখন সবাই ভালো আছি, উদ্ধারকারীরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে আমি প্রতিজ্ঞা করছি সব শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিতে আমি আমার সর্বোচ্চটুকু করে যাব। আপনারা যারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন সবাইকে ধন্যবাদ-অভিভাবকদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী’ 

উল্লেখ্য, ২৩ জুন গুহাটি ঘুরে দেখতে গেলে ভারী বর্ষণের দরুণ গুহার ভেতরেই আটকে পড়ে ১২ কিশোর ও তাদের কোচ। ওয়াইল্ড বোরস ফুটবল টিমের সদস্য দলটির কিশোদের বয়স ১১ থেকে ১৬ মধ্যে। নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর গুহার ভেতরে তাদের প্রথম খুঁজে পায় ব্রিটিশ উদ্ধারকারীরা। এরপর তাদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকে উদ্ধারকর্মীরা। একপর্যায়ে আটকে থাকা সন্তানদের অভিভাবকেরা চিঠি দিলে তার জবাব দিয়েছে গুহায় আটকে থাকা দলটি। থাই নেভি সিলের ফেসবুক থেকে চিঠিগুলো শেয়ার করা হলে সেগুলো মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

গুহার বর্তমান অবস্থা

গুহা মুখ থেকে ৪ কি.মি গভীরে ছোট্ট একটি পাথর খণ্ডের উপর ওই দলটি এখন আশ্রয় নিয়ে আছে।

থাই ও আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারীদের সমন্বয়ে গঠিত দল তাদের খাবার, অক্সিজেন, ফার্স্ট এইড বক্স সরবরাহ করছে। কিন্তু গুহায় অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ে এখনো ব্যাপক শঙ্কা আছে, সরকারি কর্মকর্তা বলছে অক্সিজেনের মাত্রা সেখানে ১৫ শতাংশ এ নেমে এসেছে যা স্বাভাবিক ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ থাকে।

থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলছে, গুহার ভেতর বাতাস দেয়ার জন্য একটি পাইপ সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

আটকে পড়া দলটি যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে সেটি আরো স্পষ্ট হয় যখন শুক্রবার একজন উদ্ধারকর্মী ডুবুরি অক্সিজেন সংকটে গুহা থেকে ফেরার পথেমারা যান।

রোববার ( ৬জুলাই ) থেকে আবারো ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। যাতে গুহার ভেতরে আরো পানি প্লাবিত হতে পারে। তাই সামরিক ও বেসামরিক উদ্ধারকারীরা সময়ের আগে ছুটছে যাতে করে আটকে পড়া দলটিকে নিরাপদে বের করে আনতে পারে।

আরও পড়ুন, গুহায় ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে উদ্ধারকারীরা

উদ্ধার হয়নি গুহায় আটকে পড়া থাই ফুটবলাররা

এ সম্পর্কিত আরও খবর