জাপানের রাইজিং সান পতাকা নিষিদ্ধের দাবি দ. কোরিয়ার

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:15:58

টোকিও অলিম্পিকে জাপানের রাইজিং সান পতাকা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে জাপানের ২০২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজকরা বিতর্কিত পতাকাটি নিষিদ্ধ করতে রাজি হননি।

দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ বলছেন, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের দশকগুলোতে জাপানি শাসনের অধীনে সহিংসতা, পাশবিক জীবনের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এ ‘শয়তানের পতাকা’ (রাইজিং সান পতাকা)। জাপানি সেনারা এ পতাকা দেখিয়েই লাখো মানুষকে হত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে বহু কোরিয়ান রয়েছেন।

a
শিল্পীর তুলিতে কোরিয়ায় জাপানের আগ্রাসন, ছবি: সংগৃহীত

 

দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রীড়া সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মনে করে, তথাকথিত রাইজিং সান পতাকাটি আগামী বছর টোকিও অলিম্পিকে অনুষ্ঠানের স্থানগুলোতে নিষিদ্ধ করা উচিত।

কারণ, দক্ষিণ কোরিয়া এ পতাকাকে জাপানিদের ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সামরিকতন্ত্রের’ প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে।

তবে চলতি সপ্তাহে টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি বলেছে যে পতাকাটি জাপানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি নিষিদ্ধ করা হবে না।

তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, পতাকা নিজেই একটি রাজনৈতিক বিবৃতি হিসেবে বিবেচিত হয় না, সুতরাং এটিকে নিষিদ্ধ বস্তু হিসেবে দেখা হয় না।

এ সিদ্ধান্তটি দক্ষিণ কোরিয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, সেখানে ক্রীড়া সংসদীয় কমিটির সভাপতি আন মিন-সুক এ সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে আন বলেন, যুদ্ধের প্রতীকী পতাকা শান্তিপূর্ণ অলিম্পিক গেমসের জন্য উপযুক্ত নয়।

a
দক্ষিণ কোরিয়ায় জাপানের রাইজিং সান পতাকাবিরোধী আন্দোলন, ছবি: সংগৃহীত 

 

উদীয়মান সূর্যের পতাকাটি এশিয়ান এবং কোরিয়ানদের কাছে শয়তানের প্রতীকের অনুরূপ, যেমনটি স্বস্তিকা নাৎসিদের প্রতীক, যা ইউরোপীয়দের আক্রমণ ও বিভীষিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

কোরিয়ান ক্রীড়া ও অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে যে টোকিও ২০২০ বা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) কাছে পতাকাটি নিষিদ্ধ করার জন্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়নি।

আইওসির মুখপাত্র বলেন, খেলার সময় স্টেডিয়ামগুলো রাজনৈতিক বিক্ষোভমুক্ত রাখতে হবে। গেমসের সময় উদ্বেগ দেখা দিলে আমরা পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেই।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সপ্তাহের প্রথম দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র কিম ইন-চুল বলেছেন, জাপান সরকারের উচিত তাদের ইতিহাসের স্বীকৃতি দেওয়া। এটি জাপান সরকারের বোঝা উচিত যে রাইজিং সান পতাকাটি প্রতিবেশী দেশগুলোতে জাপানি সাম্রাজ্যবাদ ও সামরিকতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

a
রাইজিং সান পতাকা নিয়ে জাপানিদের উল্লাস, ছবি: সংগৃহীত 

 

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার টোকিও-২০২০ এ পতাকাটি প্রদর্শন বাতিলের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

দু'দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিস্তারের মধ্যে এ পতাকা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা গত জুলাই মাস থেকে বেড়েই চলেছে।

জাপানের কাছে রাইজিং সান পতাকা সংস্কৃতির অংশ। পতাকাটি ইম্পেরিয়াল জাপানি সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছিল এবং দেশের নৌ ও প্রতিরক্ষা বাহিনী এখনও এ পতাকা ব্যবহার করে।

টুইটারে এক জাপানি নাগরিক লিখেছেন, উদিত সূর্য প্রতীকটি কী উপস্থাপন করে, সে সম্পর্কে আমাদের ভিন্ন মতামত থাকতে পারে, তবে এর অর্থ এমন নয় যে তারা সব সময় আমাদের শত্রু।

বিশ শতকের প্রথমার্ধে, কোরিয়ান উপদ্বীপে জাপান উপনিবেশ স্থাপন করে এবং অনেক কোরিয়ানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যারা বেঁচেছিলেন, তাদের দাস বানিয়ে রাখা হয়েছিল। এ নির্মম সময়টি প্রবীণ কোরিয়ানদের স্মৃতিতে আছে। উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয় ক্ষেত্রেই এটি বড় ক্ষত হিসেবে দেখা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং সে সময় জাপানি সৈন্যদের যৌন সেবা দিতে বাধ্য করা হতো কোরিয়ান নারীদের।

দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট ভক্তুভোগী নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে জাপানি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। যদিও দীর্ঘকালীন যুদ্ধ থামাতে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান ১৯৬৫ সালে এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। অনেক কোরিয়ান মনে করেন, এ চুক্তিটি অন্যায্য ছিল এবং তারা বিশ্বাস করেন যে ভুক্তভোগীদের আইনগত দাবি করার এখনও অবকাশ রয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বাণিজ্য বিরোধে রূপ নিয়েছে। জুলাই মাসে টোকিও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি রাসায়নিক পদার্থের রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যা কম্পিউটারের চিপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গত মাসে, জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়াকে তার পছন্দসই ব্যবসায়ীক অংশীদারদের তালিকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক এ পদক্ষেপটিকে ‘অন্যায়’ বলে আখ্যায়িত করে এবং বলেছে, এর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ‘বৈরী জাতি’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে জাপান।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের অংশীদারদের তালিকা থেকে জাপানকে সরিয়ে দিয়েছে। তারা ঘোষণা করেছে, এর মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে তাদের সামরিক অংশীদারিত্ব চুক্তিটি বাতিল হয়েছে, যা ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে এ বাণিজ্য বিরোধ স্মার্টফোন এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর