পাকিস্তানি ডাক্তারদের উচ্চতর ডিগ্রি বাতিল করেছে সৌদি আরব

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 21:15:32

সৌদি আরব সরকার পাকিস্তানের শত বছরের পুরনো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রাম- এমএস (মাস্টার অব সার্জারি) ও এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন) বাতিল করেছে।

এই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রাম বাতিল হওয়ার ফলে দেশটিতে কর্মরত শত শত পাকিস্তানি চিকিৎসক চাকরি হারিয়েছেন এবং তাদের অতিসত্বর সৌদি আরব ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ, ভারত, মিশর, সুদানের মতো দেশগুলোর এই ডিগ্রি বহাল রেখেছে সৌদি সরকার। ডিগ্রি বাতিল হওয়া চিকিৎসকরা সৌদি আরবে উচ্চ বেতনে কর্মরত ছিলেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে কয়েক শত দক্ষ ডাক্তারকে বেকার করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ এখনো সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

পাকিস্তানের এমএস/এমডি ডিগ্রি প্রত্যাখ্যান করে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, এ ডিগ্রিগুলোতে কাঠামোগত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অভাব রয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন ডাক্তার নিয়োগের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োজন। সৌদি আরবের এ কঠিন পদক্ষেপের পরে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনও একই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।

২০১৬ সালে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদে ইন্টারভিউ নেওয়ার পর সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের নিয়োগ দিয়েছিল।

চাকরি হারানো চিকিৎসকদের একজন গণমাধ্যমে বলেন, ‘এটি খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আমাদের জন্য। সৌদি সরকার যেখানে পাকিস্তানের এমন ডিগ্রি বাতিল করেছে, অন্যদিকে ভারত, মিশর, সুদান ও বাংলাদেশ থেকে নেওয়া একই ডিগ্রি প্রোগ্রাম বহাল রেখেছে।’

পাকিস্তানে নিবন্ধিত এক  লাখ ১০ হাজার ডাক্তার রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার বিদেশে চাকরি করেন।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পাকিস্তানের এই উচ্চ ডিগ্রি প্রোগ্রাম ত্রুটিপূর্ণ, যা চাকরি পেতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।

চাকরি হারানো চিকিৎসকরা তাদের দুর্দশার জন্য কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস পাকিস্তান (সিপিএসপি)-কে দোষারোপ করছেন।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিশন (এসসিএফএইচএস) জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে, পেশাদার যোগ্যতার জন্য আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কারণটি হলো এসসিএফএইচএস বিধি মোতাবেক পাকিস্তান থেকে আপনার মাস্টার ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য নয়।

পাকিস্তানের অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-এর মুখপাত্র ডা. আসাদ নূর মির্জা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান ডিগ্রি যোগ্যতার জন্য এটি একটি বিশাল ধাক্কা এবং অসম্মানের বিষয়।’

তিনি দাবি করেন, সিপিএসপি প্রতিনিধিরা সাম্প্রতিক সৌদি আরব ও কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ সফরকালে সিপিএসপি-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এফসিপিএস যোগ্যতার একচেটিয়া বাজার বজায় রাখতে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম সম্পর্কে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করেছে।

ডা. আসাদ নূর মির্জা বলেন, ‘এই সংকটে শুধু বেকার ডাক্তারের সংখ্যাই বাড়বে না, পাকিস্তানও বিদেশি রেমিট্যান্সের বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি হবে।’

ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডা. আলী উসমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি লাহোরের জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাহোরের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ বছরের স্নাতকোত্তর যোগ্যতা অর্জন করেছি। হঠাৎ সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমার ও আমার পরিবারকে প্রচণ্ড ধাক্কায় ফেলে আমার চাকরির চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে।’

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে পাকিস্তানের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চার হাজার ৪৪০ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চাকুরি করছেন। এর মধ্যে ১০২ জন সিনিয়র পদে অনুষদ সদস্য হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর