গান্ধী আশ্রম: যেখানে শান্তির খোঁজে আসে সকলে

ভারত, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 20:38:37

আহমেদাবাদের গান্ধী আশ্রম থেকে: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু গান্ধী আশ্রম। গান্ধী আশ্রম নামে পরিচিতি হলেও এর অফিসিয়াল নাম সবরমতী আশ্রম। আবার কেউ বলেন সত্যাগ্রহ আশ্রম। ২০১৭ সালে আশ্রমটি শতবর্ষ পূরণ করেছে।

গুজরাতের রাজধানী আহমেদাবাদ শহরের উপকণ্ঠে সবরমতী নদীর তীরে গড়ে উঠে আশ্রমটি। মহাত্মা গান্ধী এই আশ্রমের যাত্রা শুরু করেন ১৯১৭ সালে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ মহাত্মা গান্ধীর আবাসস্থলও ছিল এই আশ্রম। এখান থেকেই তিনি স্বাধীনতার আন্দোলন করেছেন। ঐতিহাসিক ডান্ডি পদযাত্রাও করেছেন। এ জন্য কোটি মানুষের ভালোবাসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে আশ্রমটি। প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ এ আশ্রম পরিদর্শনে আসেন।

গুজরাতের পোরবন্দর শহরে মহাত্মা গান্ধীর জন্ম হলেও আজ এ আশ্রমটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে আহমেদাবাদ শহরের এ আশ্রমটিতে এসে গান্ধীর বাংলা সফরের কথা মনে পড়ে যায়।

১৯৪৬ সালে জাতিগত দাঙা লাগার পর শান্তির বাণী পৌঁছে দিতে মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ করেন এবং বর্তমান সোনাইমুড়ি পৌরসভার জয়াগ নামক স্থানে তিনি পরিদর্শনে যান। সেখানকার তৎকালীন জমিদার ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ তার সকল নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দান করেন মহাত্মা গান্ধীকে। এবং তার পিতামাতার নামানুসারে ‘অম্বিকা কালীগঙ্গা চেরিটেবল ট্রাস্ট’ নামের একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। তবে ১৯৭৫ সালে এক সরকারি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘অম্বিকা কালীগঙ্গা চেরিটেবল ট্রাস্ট’ ভেঙে ‘গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট’ সৃষ্টি করা হয়।

গান্ধী আশ্রমের তথ্য মতে, আহমেদাবাদ শহরের উত্তরে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে সবরমতী নদীর তীরে ৩৬ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই আশ্রম। ১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারি গান্ধী আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আহমেদাবাদ শহরে একটি আশ্রম গড়ে তোলার চিন্তা করেন। ওই বছরই কোচরাব পল্লিতে প্রথম গড়ে তোলেন আশ্রম। পরবর্তী সময় ১৯১৭ সালে আরও বড় পরিসের আশ্রম গড়ার জন্য সবরমতী নদীর তীরে উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পান। তার পরই ওই বছরের ১৭ জুন সেখানে গড়ে তোলেন এই আশ্রম। এখানে আন্দোলনের পাশাপাশি কৃষিকাজ, গবাদিপশু পালন, দুগ্ধ খামার এবং খাদি কাপড় তৈরির উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ সালের ১০ মে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই গান্ধী আশ্রমকে গান্ধী স্মারক হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময় এখানেই গড়ে ওঠে বিশাল গান্ধী সংগ্রহশালা।

কোনো প্রবেশমূল্য নেই। সাজিয়ে তোলা হয়েছে আশ্রম। সুন্দর বাগান। নানা গাছ ও ফুল গাছে সাজানো। আশ্রমের পাশ দিয়ে চলেছে সবরমতী নদী। নদীর পানি পরিষ্কার। দু’ধারে কংক্রিটের বিশাল তীর বাঁধানো ঘাট। আশ্রমে ঢুকতেই বামপাশে গান্ধী সংগ্রহশালা। গ্রন্থাগার, ফটো গ্যালারি, গান্ধীর ব্যবহৃত নানা স্মারক, পাণ্ডুলিপি, চিঠি, তৎকালীন নানা খবরের কাগজ ইত্যাদি। কিছু দূরে ধ্যানরত গান্ধীর এক তাম্রমূর্তিও দেখা যায়। এ মূর্তি যেন আশ্রমে গান্ধীর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

সংগ্রহশালার এক কর্মকর্তা জানালেন, সংগ্রশালায় গান্ধীর লেখা বিভিন্ন গ্রন্থের প্রায় ৯ হাজার পাতার পাণ্ডুলিপি, ৩৪ হাজার ১১৭টি চিঠি, স্বাধীনতাসংগ্রাম, ডান্ডি পদযাত্রা থেকে তার জীবনের নানা মুহূর্তের আট হাজার আলোকচিত্র, গান্ধীকে নিয়ে ১৮৫টি তথ্যচিত্র এবং প্রায় ৪০ হাজার বই।

তিনি আরও জানান, এখানে হিটলারকে লেখা গান্ধীর চিঠি, গান্ধীকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি। এখানে নিয়মিত দেখানো হয় গান্ধীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র। নদী ঘেঁষে গান্ধীর আবাসস্থল। নাম হৃদয়কুঞ্জ। চার কক্ষ বিশিষ্ট টালির ঘরের পাকা দেয়াল। বারান্দায় এখনো রয়েছে একটি সুতা কাটার চরকা। গান্ধী এই আবাসস্থলে থাকাকালীন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাত্মা উপাধি দিয়েছিলেন তাকে।

১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ব্রিটিশের লবণ আইনের প্রতিবাদে গান্ধী এখান থেকে শুরু করেন স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক ডান্ডি পদযাত্রা। ৭৯ জন সত্যাগ্রহী সঙ্গে নিয়ে গান্ধীজি ২৪ দিনে ৩৯০ কিলোমিটার পথ হেঁটে ক্যাম্বে উপসাগরের ডান্ডি গ্রামে পৌঁছান।

এরপর ৬ এপ্রিল সেখানে সমুদ্রের পানি ফুটিয়ে নুন বানিয়ে ব্রিটিশের কালাকানুনের প্রতিবাদ জানান। সেখান থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ভিত্তি পায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর