ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে চায় ইসরায়েল: জাতিসংঘ

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-03-28 05:52:16

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় অতিবাহিত করছে গাজাবাসী। দীর্ঘ সময়ের চলমান হত্যাযজ্ঞ ও ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ফিলিস্তিনবাসীর জীবন বিপন্ন। বাস্তুহারা গাজাবাসীদের উপর অতর্কিত হামলার সমালোচনা করছে সারাবিশ্ব। তবুও হামলা থামাতে নারাজ ইসরায়েল প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।  এ পরিস্থিতিতে বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে কোনো সমাধান করতে না পারা আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ জানায়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে নেমেছে।

সোমবার (২৫ মার্চ) ফিলিস্তিনের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানেজ তার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই হামলা শুরুর পর থেকে গাজাবাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েল। এই গাজাবাসীদের ওপর হামলা করা যায়, তাদের মেরে ফেলা যায়, এমনকি তাদের ধ্বংস করে ফেলা যায়-এমনটাই ধরে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক পদক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা ফিলিস্তিন থেকে ফিলিস্তিনিদের মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বৈঠকে ইসরায়েলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন আলবানেজ। তিনি বলেন, গাজা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যেটা হচ্ছে তাতে গণহত্যার অভিপ্রায় স্পষ্ট। আমরা সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারি না। আমাদের এর মুখোমুখি হতে হবে, এই গণহত্যা আমাদের ঠেকাতে হবে এবং এই পদক্ষেপ যারা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ফিলিস্তিনের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন ফ্রান্সেস্কা আলবানেজ। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে গত সোমবার জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা উচিত।

ফিলিস্তিনে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উঠা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ দলের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। বিভিন্ন দেশই এখন এই গণহত্যার অভিযোগ খতিয়ে দেখার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

আলবানেজের এই প্রতিবেদনে সমর্থন দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের দূতেরা। ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে যারা আলবানেজের এই প্রতিবেদনে সমর্থন দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে মুসলিম ও আরব দেশের দূতেরা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন লাতিন আমরিকার দেশের দূতেরাও।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) হয়ে আলবানেজের এই প্রতিবেদনে সমর্থন দিয়েছে পাকিস্তান। ওআইসির পক্ষ থেকেও ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে। আলবানেজ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে যখন এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, তখন সেখানে উপস্থিত পাকিস্তানের প্রতিনিধি বলেন, ‘গাজায় গণহত্যার তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনার সাহসের আমরা প্রশংসা করি।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এমন সময়ে গণহত্যার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে, যখন আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজার রাফাহ এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে হামলায় ৭৬ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৩২ হাজার ৪৯০ জন নিহত হয়েছে।

আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে মিশরের প্রতিনিধি বলেন, গাজা উপত্যকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত আক্রমণ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তারা। বৈঠকে উপসাগরীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে কাতার। ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের পদক্ষেপ চায় তারা। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর