মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০০

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:36:26

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ২০০ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতি। রোববার ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এটি ছিল এক দশকেরও বেশি সময়ে এই এলাকায় আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ঝড়ের কারণে এখনও রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বু মা গ্রামের প্রশাসক কার্লো বলেন, শতাধিক নিখোঁজ হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।  পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের ৯০% ধ্বংস হয়েছে।

সামরিক জান্তা সোমবার পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। তবে কোথায় নিহত হয়েছে তা উল্লেখ করেনি।

ঝড়ে মানুষের মৃত্যু ছাড়াও ঘর বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এতে ভেঙে গেছে হাজার হাজার গাছপালা।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাখাইন রাজ্য। এখনও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ের বাসিন্দারা।

বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১১টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন অ্যালিন ইয়াং হতাহতের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছে। তাদের হিসাবে, সিত্তওয়েতে ১২টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে। যেখানে ১০০,০০০-এরও বেশি লোক বাস করে।

ঝড়ের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে অনেকে মারা গেছে। প্রবল বাতাসের কারণে গাছ ভেঙে পড়ায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছেন, তারা ১১০টি মৃতদেহ দাফন করেছেন, যার মধ্যে ৩০টি শিশু রয়েছে।

আলিন ইয়াংয়ের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। আরও মৃত্যু হবে, কারণ বন্যার কারণে শত শত মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।”

এএফপি জানিয়েছে, সিত্তওয়ের বু মা ও নিকটবর্তী খাউং ডোকে কার নামে আরও দুটি রোহিঙ্গা গ্রামে কমপক্ষে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শিবিরের বাসিন্দারা বলেছেন, মিয়ানমারের জান্তা সৈন্যরা ঝড়ের আগে তাদের সরিয়ে নিতে ১০টি ট্রাকে এসেছিল। কিন্তু অনেকে অবিশ্বাসের কারণে সরে যেতে অনিচ্ছুক ছিল। আবার অনেকে মনে করেছে, ঝড় ততটা গুরুতর হবে না। সৈন্যরা কিছু বয়স্ক লোককে অস্থায়ী আশ্রয়ে নিয়ে ফিরে যায়।

সামরিক শাসনের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেত কায়ে পাইন গ্রামের একজন রোহিঙ্গা ব্যক্তি বলেন, “থাই চাউং এবং কাউং টাকা গ্রামে মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০০ জন। অন্যরা স্কুল এবং হাসপাতালে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র যা ইতিমধ্যে পূর্ণ ছিল। যদি পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র থাকত, তাহলে মৃতের সংখ্যা এত বেশি হতো না।”

জাতিসংঘের শরণার্থী কার্যালয় জানিয়েছে, ঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে না আসা মানুষেরাই মারা গেছেন বেশি।

স্থানীয় উদ্ধারকারী দল মায়িতা ইয়াংচি ফাউন্ডেশনের জানায়, রাজ্যের রাজধানীতে, পাঁচজন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে একজন নারী মারা গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। কারণ সেই ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

মিয়ানমারের সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া মঙ্গলবার জানিয়েছে, রাথেডাং টাউনশিপের একটি গ্রামে একটি মঠ ধসে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামে একটি ভবন ধসে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে।

সামরিক জান্তা সোমবার পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। তবে কোথায় নিহত হয়েছে তা উল্লেখ করেনি।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলেছে, তাদের প্রাথমিক অনুমান প্রায় ৩.২ মিলিয়ন মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাদের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

মঙ্গলবার ওসিএইচএ-এর তথ্যে বলা হয়েছে, “রাখাইনের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ছয়টি এলাকায় সহায়তা দেওয়া দরকার। এখন সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদন পেতে হবে।”

এদিকে রাখাইনে, স্থানীয় উদ্ধারকারী দল ও স্বেচ্ছাসেবকদের মতে, বুধবার পর্যন্ত সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা এখনও পৌঁছায়নি।

জান্তা মিডিয়া বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে একটি জাহাজে রাখাইনের জন্য ত্রাণ সরবরাহের ফুটেজ প্রচার করেছে।

সিত্তওয়েতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা মিইত্তা ইয়াংচি ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমাদের চালের মজুদ কমছে। এখানে আরও সহায়তা দরকার।”

একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “কোন সাহায্য নেই, জাতিসংঘ নেই। আমরা নিজেরাই আছি।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর