২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশে চীনের কৃত্রিম চাঁদ

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 03:32:16

সূর্যের আলো ব্যবহার করে রাতের অন্ধকার দূর করতে মহাকাশে কৃত্রিম চাঁদ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে চীন। চীনের দৈনিক সংবাদপত্র এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক-এর বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরের দ্যা স্ট্র্যাইট টাইমস এ খবর প্রকাশ করে।

দ্যা স্ট্র্যাইট টাইমস -কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের প্রথমসারির একজন বিজ্ঞানী জানান, রাতের বেলায় শহুরে আলোকসজ্জা আনতে পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম চাঁদ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীনের মহাকাশ সংস্থা।

পত্রিকাটি জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে সিচুয়ানের জিচাং উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রাজ্যটির রাজধানী চেংডুর সরাসরি ওপরের কক্ষপতে এ কৃত্রিম চাঁদ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে চীন। যদি এ উৎক্ষেপণ সফল হয়, তবে ২০২২ সালের মধ্যে আরও তিনটি একই জাতীয় বস্তু উৎক্ষেপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চেংডুর তিয়ান ফু নিউ এরিয়া সায়েন্স সোসাইটির প্রধান উ চুনফেং।

তিনি বলেন, ‘এ কৃত্রিম চাঁদের একটি প্রতিফলনকারী প্রলেপ থাকবে যা কিনা সূর্যের আলোকে প্রকৃত চাঁদের মতই পৃথিবীতে প্রেরণ করবে।’

‘রাতে প্রকৃত চাঁদের সম্পূরক হিসেবে মানুষের তৈরি চাঁদ আলোকসজ্জা উপগ্রহের কাজ করবে। যদিও এটি চাঁদের চেয়ে আট গুণ বেশি উজ্জ্বল হবে।’

উ চুনফেং বলেন, ‘কৃত্রিম চাঁদ পৃথিবী থেকে ৫০০ কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে স্থাপন করা হবে বলে চাঁদের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। কারণ প্রকৃত চাঁদ পৃথিবী থেকে তিন লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।’

‘কিন্তু পুরো আকাশকে আলোকিত করতে এটি পর্যাপ্ত নয়। মানুষের চোখে এ কৃত্রিম চাঁদ রাস্তার সাধারণ বাতির পাঁচ ভাগের এক ভাগ আলো দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

‘এটির অবস্থান ও আলোক রেখার উজ্জ্বলতা পরিবর্তন হতে পারে এবং এটির অন্তর্ভুক্ত এলাকা কয়েক ডজনের মধ্যে নেমে আসতে পারে।’

কৃত্রিম চাঁদ শহরের রাস্তার বাতির প্রয়োজন মেটাতে পারবে।

উ বলেন, ‘কৃত্রিম চাঁদটি যদি চেংডু শহরের ৫০ কিলোমিটার আলোকিত করে, তবে বছরে প্রায় এক দশমিক দুই বিলিয়ন ইউয়ানের বৈদ্যুতিক খরচ বাঁচাতে পারবে।’  

‘এদিকে দুর্যোগকালে অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা আলোকিত করতে পারবে এ কৃত্রিম চাঁদ। যা ত্রাণ সাহায্য ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সাহায্য করবে।’

এ চাঁদের ঔজ্জ্বল্য সমন্বয় করা যাবে এবং প্রয়োজনে সম্পূর্ণভাবে বন্ধও করা যাবে। যাই হোক, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে এ উপগ্রহ থেকে পৃথিবীতে কম আলো পৌঁছাবে।

চীনা বিজ্ঞানী বলেন, ‘প্রথম কৃত্রিম চাঁদটি হবে মূলত পরীক্ষামূলক, কিন্তু ২০২২ সালের তিনটি চাঁদ হবে নগরীয় ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার চুক্তিসহ।’

‘মানুষের তৈরি নতুন তিনটি চাঁদ ক্রমান্বয়ে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করবে, কারণ সূর্যের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো সব সময় ভাল অবস্থানে থাকবে না এবং চাহিদামত এগুলো এক সাথে ২৪ ঘণ্টা পৃথিবীর প্রায় তিন হাজার ৬০০ থেকে ছয় হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা আলোকিত করবে।’   

উ জানান, চীনের একাধিক উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট, যার মধ্যে আছে হার্বিন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্প, মানুষেরর তৈরি এ চাঁদ প্রকল্প পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে এবং পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপনের অনুমোদন দিয়েছে।

এই অনুমোদনের পরেও উ চুনফেং এ প্রকল্পের কিছু সমালোচনাও তুলে ধরেন। যার মধ্যে আছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর এর ক্ষতিকর শারীরিক পরিণতি, এর ফলে দিন ও রাতের মধ্যে তফাৎ কমার কারণে বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়া যেমন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

‘নির্জন মরুভূমিতে আমরা এর পরীক্ষা চালাব, তাই এর আলোর দীপ্তি কোন মানুষ অথবা ভূমিতে কোন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করবে না।’

‘যখন উপগ্রহটি সক্রিয় থাকবে, যেমন বিশাল আকৃতির মনে করা হচ্ছে আসলে তেমন নয়, তখন মানুষ শুধু একটি উজ্জ্বল তারা দেখবে।’

যাই হোক, চীনের কৃত্রিম চাঁদগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা ও ব্যবসায়ীক মডেলের সাপেক্ষে আরও বহু কাজ করার দিকে নজর দিচ্ছেন উ চুনফেং।

তিনি বলেন, ‘চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলো

মহকাশ থেকে জ্বালানি আহরনের দিকে নজর দিচ্ছে এবং এ প্রতিফলনকারী আয়না কিছুদিন আলোচনার মধ্যে থাকবে।’

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ‘ব্যানার’ নামক এক প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৯ সালে রাশিয়া ২৫ মিটার পরিধির একটি আয়না মহাকাশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। ঐ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সূর্যের আলোকে রাশিয়ার শহরগুলোর দিকে ফেরানো কিন্তু মহাকাশ আয়নাটির উৎক্ষেপনেই ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। বাজেট স্বল্পতার কারণে পুরো প্রকল্পটি পরে বাতিল করা হয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর