ইউরোপের প্রথম পানির নিচের রেস্তোরাঁ

ইউরোপ, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:51:10

নরওয়ের সর্বদক্ষিণের উপকূলে উত্তর সাগরে পাঁচ মিটার পানির নিচে ইউরোপের প্রথম পানির নিচের রেস্তোরাঁ নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। গত জুলাই মাসে নিমজ্জিত পেরিস্কোপের মত ১১০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁকানো কংক্রিটের ফলক ডুবানো হয় এবং বর্তমানে ভেতরের কারুকাজ চলছে যা ২০১৯ সালের বসন্তে খোলা হবে ধারণা করা হচ্ছে।

পানির নিচের এই রেস্তোরাঁর নকশা করেছে নরওয়ের সাজসরঞ্জাম প্রতিষ্ঠান স্নোহেট্টা যার আরও কিছু কাজের জন্য সুনাম অর্জন করেছে। যেমন- মিশরের বিবলিওথেকা আলেক্সান্ড্রিনা, অসলো অপেরা হাউস, নিউইয়র্কের ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল প্যাবিলিয়ন ও টাইমস স্কয়ার।

কাজ শেষ হলে তিন স্তর বিশিষ্ট এই রেস্তোরাঁর ৫ হাজার ৩০০ বর্গ মিটারের অভ্যন্তরীণ জায়গায় প্রায় ১০০ জন অতিথি একসাথে বসতে পারবেন। ১১ মিটার প্রশস্ত প্যানরোমিক জানালার মধ্য দিয়ে চারদিকে সামুদ্রিক পরিবেশ ঘেরা মনোরম দৃশ্য দেখা যাবে।  

উপকূলের নিকট একটি প্রমোদতরীতে ছয় মাস যাবৎ রেস্তোরাঁটি তৈরি হচ্ছিল, তারপর ভারী নৌযানের সাহায্যে ৬০০ ফুট দূরে এটি বর্তমান অবস্থানে স্থাপন করা হয়। কাঠামোটি ডুবানোর জন্য এর ভেতরে পানিভর্তি কন্টেইনার স্থাপন করা হয়। সমুদ্রতটে স্থাপন করার জন্য এটিকে ১৮টি নোঙর দ্বারা আটকানো হয়েছে।

সিএনএনকে দেওয়া বক্তব্যে স্নোহেট্টা’র জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী রুনে গ্রাসডল বলেন, ‘এটি খুবই আনন্দদায়ক অপারেশন ছিল, কাঠামোটি যখন নির্ধারিত স্থানের দুই ইঞ্চি দূরে।’

কাঠামোটির অর্ধেকেরও বেশি পানিতে নিমজ্জিত করা হয় এবং উপকূল থেকে স্বচ্ছ কাচের রাস্তা দিয়ে হেঁটে অতিথিরা রেস্তোরাঁর দরজা পর্যন্ত পৌঁছাবেন। হাঁটার রাস্তাটি উপকূলের সমান্তরালে করা হয়েছে।

নরওয়ের এই তটরেখার কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে রেস্তোরাঁর ভেতরটা শক্ত কংক্রিট দিয়ে তৈরি। প্রকৌশলী গ্রাসডল বলেন, ‘যখন আমরা উপরিভাগ থেকে পাঁচ মিটার নিচে যাই, প্রধান সমস্যা হচ্ছে পানির চাপ। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ঢেউ। এখানে প্রচণ্ড বাতাস ও ঢেউ। সকল বাধা প্রতিরোধ করতে কাঠামোটি হালকা বাঁকানো অবস্থায় রাখা হয়েছে যাতে ঢেউয়ের সাথে ভালভাবে পাল্লা দিতে পারে এবং এটি পুরু করে তৈরি করা হয়েছে। কাঠামোটির কংক্রিটের পুরুত্ব আধা মিটার এবং এক্রাইলিক জানালার পুরুত্ব প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার।’

কাঠামোটি একটি ক্ষত এলাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত ছিল সুচিন্তিত। গ্রাসডল বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে আসার আগেই বর্তমান স্থানের পাশেই তার একটি প্রতিকৃতি করেছিল। আমরা তাদেরকে আরও কয়েকশত মিটার দূরে তা স্থাপনের পরামর্শ দিই, যেখানে আসলেই সাগর আরও উত্তাল। আমরা ভেবেছিলাম সেটি প্রকৃতি দর্শনের জন্য আরও ভাল হবে। আমি মনে করি এটি রেস্তোরাঁটিকে বিশ্বের অন্যান্য পানির নিচের রেস্তোরাঁ থেকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।’

রেস্তোরাঁটির নিকটেই একটি হোটেল চালাচ্ছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মী গাউটে ও স্টিগ আবোস্ট্যাড। উভয় নরওয়ের সর্বদক্ষিণের মাথায় সবচেয়ে পুরাতন ও জনপ্রিয় বাতিঘর এলাকা লিন্ডেসনেসে বসেন। সেখানে যাওয়া এত সহজ নয়, সবচেয়ে ভাল উপায় হল অসলো থেকে বিমানে লাগোয়া বিমানবন্দর ক্রিস্টিয়ানসেন্ডে এক ঘণ্টার একটি স্বল্প সময়ের যাত্রা। গ্রাসডল জানান নৌসেবা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর