রাজনৈতিক হিংসায় মিশরে একদিনে ৭৫ ফাঁসির আদেশ!

আফ্রিকা, আন্তর্জাতিক

মায়াবতী মৃন্ময়ী, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 09:27:10

 

একদিনে এতো মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা বিরল। রাজনৈতিক সংঘাতের দেশ মিশরে এমনটিই ঘটেছে শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর)।

সামরিক বাহিনীর সাহায্যে দেশটির ইতিহাসে প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল আবেদল ফাতাহ আল সিসি'র বর্তমান সরকার এই ফাঁসি দিয়েছে। সরকারের কঠোরতায় মিশরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বাধতে না পারলেও বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। তীব্র প্রতিবাদ করেছে অ্যামনেস্টি-সহ সারা পৃথিবীর মানবাধিকার সংগঠনসমূহ আর বিবেকবান মানুষ।

এখন পর্যন্ত একমাত্র নির্বাচিত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মোরসির উৎখাতের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর শাস্তি হিসাবে ৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড আদেশ দিল মিশর সরকার। এ ছাড়া কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আরও ৪৭ জনকে। ধারণা করা হচ্ছে, শাস্তিপ্রাপ্তরা ইসলামপন্থী বিপ্লবী দল মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থক। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন মিশরের বেশ কয়েক জন মুসলিম ধর্মীয় নেতাও।

নীল নদের তীরে একদা পৃথিবীর অন্যতম আদি সভ্যতার দেশ মিশর জন্মের পর থেকেই রক্ত আর হত্যার অতীত-বহন করছে। ফেরাউনের পর গ্রিক ও রোমান সভ্যতা আর রাজনীতি দেশটির পলে পলে মিশলেও হত্যার ঐতিহ্য বন্ধ করতে পারেনি। আরও পরে আরবদের শাসনেও রক্তাক্ত মিশর যেন আধুনিক যুগে নাসের, সাদাত, মোবারকের পথ ধরে রক্ত পিচ্ছিল পথেই চলছে। অতি সাম্প্রতিক আরব বসন্তের জেসমিন আন্দোলনের স্মৃতি মুছে গিয়ে ইসতেকলাল বা বিপ্লবের প্রান্তর তাহরিক স্কোয়ার হয়েছে মৃত্যুপুরী।

ফেরাউনের দেশ মিশরের হাজার বছরের ইতিহাসে ২০১২ সালে দেশব্যাপী গণ আন্দোলনের পর মিশরের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন স্বৈরতন্ত্রী হোসনি মুবারক। জনতার সামনে থেকে সেই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুড। তারই ফলে ক্ষমতায় এসেছিলেন মিশরের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মোরসি।

কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিরোধিতায় এক বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা মোরসি। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে চরম বিক্ষোভ, রাজনৈতিক সংঘাত ও অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোরসিকে উৎখাত করেছিলেন সেনা প্রধান আবেদল ফাতাহ আল সিসি। মোরসিকে সরিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন এই সামরিক জেনারেল।

গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন জনতা। সেখানেও সামনের কাতারে ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড। কিন্তু পুরো সেনাবাহিনীকে নামিয়ে সেই আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল। বেআইনি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুডকে। সরকারি কোনও হিসেব পাওয়া না গেলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিল যে, অন্তত ৮১৭ জনকে গুলি করে মেরেছিল মিশর সেনা। অসংখ্য মানুষকে জেলেও ভরেছিল সামরিক ‘সিসি’ সরকার। তাদের মধ্যে থেকেই এবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ হল ৭৫ জনের। যাঁদের অধিকাংশই মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থক, আলেম ও ইসলামপন্থী বলে পরিচিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর