ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী : ক্রিকেটজীবনের ভিতর-বাহির

, ফিচার

শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 21:21:52

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে শুধু ক্রিকেট নিয়েই যে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কথা বা স্মৃতিচারণ থাকে তা না। মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিচিত্র ও আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার-স্যাপার এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বিষয়-আশয়ও উঠে আসে বইগুলোতে। যা পড়ে পাঠকেরা চমৎকৃত হন। অনেক কিছু জানতে পারেন প্রিয় ক্রিকেটার সম্পর্কে। যেমন, পাকিস্তানী ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি যে খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ-পাঁচটি বছর কমিয়ে নিয়েছিলেন, অথবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীকে যে অস্ট্রেলিয়ার এক খেলোয়াড় স্লেজিং করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন, এরকম কিছু চমকপ্রদ তথ্য হয়তো কেবল ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীতেই পাওয়া যেতে পারে। আবার, ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে পুনরায় যুবরাজ সিংয়ের ক্রিকেটে ফিরে আসার হৃদয়স্পর্শী কাহিনীর কথাই ধরুন না! সেই কাহিনী বিস্তারিত পাওয়া যাবে যুবরাজের আত্মজীবনীতেই।

ক্রিকেটারদের বর্ণিল জীবনের শৈল্পিক আখ্যান তাদের জীবনীগ্রন্থগুলো ◢

 

যখন ক্রিকেটার নিজেই নিজের ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের কাহিনীটা লেখেন, সেটাকে বলা হয় ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী। সেখানেও ক্রিকেটার কোনো লেখক বা ক্রীড়া সাংবাদিকের সাহায্য নিয়ে যৌথভাবে বইটি লিখতে পারেন। কিন্তু যখন অন্য কোনো লেখক একেবারে আলাদাভাবে একজন বরেণ্য ক্রিকেটারের জীবনকাহিনী পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন, যেখানে সাধারণত সেই নির্দিষ্টি ক্রিকেটারের সরাসরি কোনো সংস্রব বা ভূমিকা থাকে না, সেটাকে বলে ক্রিকেটারদের জীবনী। তবে, সেক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার যদি বেঁচে থাকেন, বইটি লিখতে বা বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে তাঁর অনুমতির দরকার হয়। সরাসরি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর সংখ্যাই বেশি। তবে, বেশ কিছু অসাধারণ জীবনীগ্রন্থ, যেমন সুনীল গাভাস্কারের ‘সানি ডেজ’ (১৯৭৭), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯) বা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে ‘মাশরাফি’র মতো দারুণ কিছু জীবনীগ্রন্থও আমরা পেয়েছি লেখকদের হাতে।

ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটিকে অগ্রপথিক ধরা হয়। ১৯৫১ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরের কোনো ক্রিকেটারের আত্মজীবনীগ্রন্থের লেখকও জিম লেকারই। ১৯৬০ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘ওভার টু মি।’ এরপর ৬০’র দশক ও ৭০’র দশকে অল্পবিস্তর প্রকাশিত হতে থাকে বেশ কিছু আত্মজীবনী। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারকে নিয়ে ‘সানি ডেজ’ এবং ১৯৮৩ সালে ইমরান খানের স্বনামে (ইমরান) তাঁর জীবনীগ্রন্থ বের হয়। তবে, নব্বইয়ের দশকে এসে, মানে ১৯৯০ সালের পর থেকে এধরনের আত্মজীবনী ও জীবনীগ্রন্থের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক সাবেক ক্রিকেটার, এমনকি তখনও খেলছিলেন এমন কিছু ক্রিকেটারও এসময় তাঁদের আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

এসময়ই প্রকাশিত হয় ব্রায়ান লারার ‘বিটিং দ্য ফিল্ড’ (১৯৯৫), ওয়াসিম আকরামের ‘ওয়াসিম’ (১৯৯৮), রিচি বেনোর ‘অ্যানিথিং বাট অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ (১৯৯৮), অ্যালান ডোনাল্ডের ‘হোয়াইট লাইটনিং’ (১৯৯৯)। ২০০০ সালের পরের সময়কালে এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে আরো। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের ‘দ্য ডেফিনিটিভ অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), ইয়ান বোথামের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), শেন ওয়ার্নের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০২), ডেনিস লিলির ‘মিনেস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০৩), বাসিল ডি অলিভিয়েরার ‘ক্রিকেট অ্যান্ড কনস্পিরেসি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ (২০০৪), কপিল দেবের ‘স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্ট’ (২০০৪), স্টিভ ওয়াহর ‘আউট অব মাই কমফোর্ট জোন’ (২০০৬), অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ (২০০৮), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯), শোয়েব আখতারের ‘কন্ট্রোভার্শিয়ালি ইয়োরস’ (২০১১), যুবরাজ সিংয়ের ‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ : ফ্রম ক্রিকেট টু ক্যান্সার অ্যান্ড ব্যাক’ (২০১২), শচীন টেন্ডুলকারের ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ (২০১৪), এবি ডি ভিলিয়ার্সের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০১৬), সৌরভ গাঙ্গুলির ‘এ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ (২০১৮), ভিভিএস লক্ষ্মণের ‘টুএইটি ওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ (২০১৮)-এর মতো অসংখ্য আলোচিত ও পাঠকপ্রিয় জীবনী বা আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় এই সময়কালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363833752.jpg
মাশরাফির বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’ ◢



বাংলাদেশের বরেণ্য ক্রিকেটারদের নিয়ে জীবনী বা আত্মজীবনী লেখার ইতিহাস যদিও অল্পদিনের, তবে ইতোমধ্যে টুকটাক করে এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো ক্রিকেটারের সরাসরি আত্মজীবনী এখনো বের হয়নি। গুণী কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক লিখতে শুরু করছেন ক্রিকেটারদের জীবনীগ্রন্থ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’ ও মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের ‘মানুষ মাশরাফি’। তবে, এধরনের বইয়ের সংখ্যা বাংলাদেশে এখনো অপ্রতুল।

শহীদ আফ্রিদির বিতর্কিত আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ ◢

 

আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো দর্শক ও ভক্তদের সাথে ক্রিকেটারদের বন্ধনকে করে আরো জোরালো। ভক্তদের আরো কাছে নিয়ে আসে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট জীবন এবং ব্যক্তিজীবন, একটা মানুষের দুটো জীবন যে হতে পারে একেবারে আলাদা, তা জানা যায় এই বইগুলোর মাধ্যমেই। কখনো কখনো আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এমন সব বিস্ফোরক তথ্য যা সৃষ্টি করে তুমুল বিতর্ক। এতে জড়িত হন আরো অনেকেই, পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটাররাও। তেমন বিতর্কই সৃষ্টি হয়েছিল, সাবেক পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ প্রকাশের পর। বইটিতে ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে তুলে ধরে ব্যক্তিত্বহীন আখ্যায়িত করেন আফ্রিদি। গম্ভীর প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আফ্রিদি যেন সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেন। গম্ভীরকে অসুস্থ মানসিকতার উল্লেখ করে ক্রিকেটের কলঙ্ক বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। জবাবে, গৌতম গম্ভীরও পরে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি টুইট করে বলেন, ‘আফ্রিদি, তুমি এত উচ্ছল মানুষ! সে যাক গে, আমরা চিকিৎসার জন্য এখনো পাকিস্তানিদের ভিসা অনুমোদন দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব।’

ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’ ◢



এরকমই বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ২০১৮-তে প্রকাশিত ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’। এতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। মঈন জানিয়েছেন ২০১৫ অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালীন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার তাঁকে ‘ওসামা’ বলে ডেকেছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ইংরেজ অরাউন্ডার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ওই অ্যাশেজ সিরিজ তাঁর জন্য খুবই ভালো গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ওই সিরিজে অত্যন্ত রাগিয়ে দিয়েছিল একটি দুঃখজনক ঘটনা। ক্রিকেট মাঠে তিনি কোনোদিন অতটা রেগে যাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে আট নম্বরে নেমে ব্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রান যোগ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। কিন্তু মঈনের দাবি, ওই ম্যাচেই তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেন’-এর সাথে তুলনা করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার। শুনে চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল তার। পরে তিনি দলের কয়েকজনকে বিষয়টা জানিয়েওছিলেন। সেই কথা পৌঁছেছিল ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিসের কানেও। বেলিস তা জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয় কোচ ডারেল লেম্যানকে।
লেম্যান ওই অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটারকে ডেকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিলেন। কিন্তু সে নাকি তখন তা অস্বীকার করে জানিয়েছিল, ‘ওসামা’ নয়, মঈনকে মাঠে তিনি ‘পার্টটাইমার’ বলেছিলেন। কিন্তু মঈন বলেন, ‘পার্টটাইমার’ আর ‘ওসামা’ এই কথাদুটি এতটাই আলাদা যে গুলিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব।

ঠিক তেমনি, অনেক রকম বিতর্ক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইয়ান বোথাম, সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে অল্প ক’ বছর হলো সাবেক হওয়া শোয়েব আখতার ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আত্মজীবনীও। তবে আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো শুধু যে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দেয়, তা নয়। এখানে উঠে আসে অনেক সুন্দর ও চমকপ্রদ তথ্য, যা না ইতোপূর্বে কখনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আর না ক্রিকেটার নিজের মুখে বলেছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলির আত্মজীবনী ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ ◢

 

যেমন, ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইতে সৌরভ তুলে ধরেছিলেন এক মজার তথ্য। তখনও ভারতের অধিনায়কত্ব করছিলেন সৌরভ। সেসময় দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল তাকে। মেকআপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ আধিকারিক চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে তাঁর অনুরোধে বিষয়টি গোপনই রাখেন ওই পুলিশ।

ভিভিএস লক্ষ্মণের আত্মজীবনী ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ ◢



তেমনি, ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ভারতের সাবেক সফল টেস্ট ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রমী এক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সালটা ছিল ২০০৮। ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিল্লিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টই ছিল লক্ষ্মণের শততম টেস্ট ম্যাচ। লক্ষ্মণ তাঁর বইতে জানিয়েছেন সেই টেস্ট শেষ হওয়ার পরই স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত ভারতীয় দলের টিমবাস চালিয়েছিলেন ধোনি। লক্ষ্মণ লিখেছেন, ধোনিকে বাস চালাতে দেখেও তাঁর ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ তখন তিনি ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। অধিনায়ক টিম-বাস চালাচ্ছেন, এরকম ভাবনাটাই তার আগে কখনো কারো মাথায় আসেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মণ। তবে, লক্ষণ মনে করেন, ধোনি এরকমই। কে কী মনে করল, পাত্তা দেয় না। করে যায় নিজের কাজটাই!

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনী শুধু একজন ক্রিকেটারের জীবন নিয়েই নয়, কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে একটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কোনো একসময়ের দর্পণ। তা পড়ে বোঝা যায়, ওই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও অবকাঠামোর অবস্থাও। তাই এধরনের একেকটা বই আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্রিকেট জ্ঞানের আধার’। আর সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে বা সৃষ্টিশীল কাজ হিসেবেই কি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী বা জীবনীমূলক বইগুলো পিছিয়ে আছে? স্রেফ সেই সাত দশক আগে জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ অথবা সাম্প্রতিক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ ও সৌরভ গাঙ্গুলির ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইগুলোর নামগুলোর দিকেই খেয়াল করুন না! বই পড়েন এবং ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা রাখেন, এমন সব মানুষের নজর সহজেই কেড়ে নেয় এই সৃষ্টিশীল নামগুলো। আর ভেতরের লেখার উপাদানও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বা অন্যান্য লেখকদের সাহায্য নিয়ে। তাই তো, শিল্পকর্ম হিসেবে সেগুলো ভালোই আকর্ষণ করে রস-অনুসন্ধানী ক্রিকেটামোদী পাঠকদের।

এই জীবনীগ্রন্থগুলো দারুণ সহায়ক ও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে আগামীদিনের ক্রিকেটারদের জন্য। দুঃসময় ও স্বাস্থ্যগত মহাসংকটকে অতিক্রম করে কিভাবে ক্রিকেটে ফেরা ও টিকে থাকা যায়, তা তারা জানতে পারবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও যুবরাজ সিংয়ের মতো ক্রিকেটারের জীবনী বা আত্মজীবনী পড়েই।

উল্লেখ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’র কথা। বইয়ে লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সত্যিকার বীর কারা, সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় বলি, বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি—টাকা নেই, পারফর্ম করি। অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এরচেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা। রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে; বীরত্ব নেই।’

একজন ক্রিকেটার হয়েও মাশরাফির জীবনবোধ যে অসাধারণ, অনন্য যে তার দেশপ্রেম, এই বিষয়টাই তো ফুটে উঠেছে মাশরাফির কথনে! ক্রিকেটারাও যে মানুষ, মানুষ হিসেবে তাদের অনেকেরই যে চমৎকার জীবনদর্শন রয়েছে, রয়েছে সুন্দর কিছু চিন্তা, সেসব এভাবেই অনেক সময় প্রকাশিত হয় তাঁদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে। তাই তো, এসব বই ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে আসে ভক্তদের আরো কাছে। বইগুলোর মাহাত্ম্য এখানেই!

 

আরো পড়ুন
সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ফাইনালের সাক্ষী লর্ডস

এ সম্পর্কিত আরও খবর