জৈন্তাপুরে পাহাড়ের কোলে ‘লাল শাপলা’র চাদর

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-01-15 18:11:18

হালকা কুয়াশামোড়া সকাল। আড়মোড়া ভেঙে সূর্য পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছে। শীতের সোনা রোদে ঝলমল করে উঠছে চারপাশ। একটু অদূরেই মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ে খেলা করছে ছোপ ছোপ সাদা মেঘ। তার পাদদেশে বিলের কালচে নীল পানিতে চোখ মেলতে শুরু করেছে লাল শাপলা ফুল। দেখে মনে হবে পাহাড়ের কোলে লাল চাদর। যা মোহনীয় করে তুলেছে পুরো এলাকাকে।

দৃ্শ্যটি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তের লাগোয়া সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার। পৌষের এক সকালে জৈন্তাপুরের ডিবি বিলের লাল শাপলাকে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম

পাহাড়ের কোলে লাল শাপলা ফুলের চাদর/ছবি: নূর এ আলম


সিলেটকে ৩৬০ পীর-আউলিয়ার দেশ বলা হয়। মাজার-মসজিদ নানা স্থাপনা রয়েছে এখানে। আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যেও ভরা সিলেট বিভাগ। চা-বাগান, জলমগ্ন বুনো বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝরনা, দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি হাওরসহ পুরো বিভাগে জুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। এরমধ্যে জাফলং এর কাছাকাছি নয়নাভিরাম জৈন্তাপুর। এখানে ডিবির বিলকে লাল শাপলা বিলও বলা হয়।

লাল শাপলার পাশাপাশি গাছগাছালিভরা মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যও উপভোগ করেন পর্যটকরা/ছবি: নূর এ আলম


লাল শাপলার পাশাপাশি গাছগাছালিভরা মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যও দেখতে প্রতিদিন আশপাশের তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও হাজারো মানুষ আসেন এখানে। দেশের অন্যান্য বিলে বর্ষায় লাল শাপলা বেশি দেখা গেলেও ডিবির বিলে শীতে বেশি শাপলা ফুল ফোটে।

ডিঙি নৌকায় বিলের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন পর্যটকরা/ছবি: নূর এ আলম


জৈন্তাপুরের ‘শাপলার রাজ্যে’ ডিঙি নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। এসব নৌকায় বিলের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা। হাতে হাত রেখে প্রেমিক যুগল গেয়ে ওঠেন ‘তুমি সুতো বেঁধেছ, শাপলার ফুল নাকি তোমার মন…’ ।

বিলের জলে শিকারি বক/ছবি: নূর এ আলম


বিলের জলের নীল আকাশে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা পরিয়ায়ী পাখি। লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে খাবারের খোঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে লুকিয়ে থাকে শিকারি বক।  

বিলের ধারে দেখা মিলবে জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী এক চিরায়ত পদ্ধতি মহিষ দিয়ে হালচাষের দৃশ্য/ছবি: নূর এ আলম


সীমান্তঘেঁষা জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন-যাপন খুব সাধারণ। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠে তাদের মন। প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছালেও অভ্যস্ততা গড়ে ওঠেনি। জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী এক চিরায়ত পদ্ধতি গরু-মহিষ, জোয়াল ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ। তাই তো পাওয়ার টিলারের বদলে এখানে দেখা মিলবে বিলের ধারে মহিষ দিয়ে হালচাষের দৃশ্য।

শাপলার বিলে শুধু যে পর্যটকদের আনাগোনা তা নয়, স্থানীয় শিশু কিশোরদের দুরন্তপনার দেখা মেলে/ছবি: নূর এ আলম


শাপলার বিলে শুধু যে পর্যটকদের আনাগোনা তা নয়, এখানে স্থানীয় শিশু কিশোরদের দুরন্তপনার দেখা মেলে। কাক ডাকা ভোরে শাপলা তুলতে বের হয় তারা। শাপলা বিক্রি করে অসচ্ছল সংসারের অভাব মেটানোর চেষ্টা করে শিশুরা। শাপলা তুলতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মেতে ওঠে হুই-হুল্লোড়ে। এই শিশুরা শেষমেষ বাড়ি ফেরে হাত ভর্তি শাপলা আর উচ্ছ্বল হাসি নিয়ে। বিলে বিচরণ করা এসব শিশুদের দেখে পর্যটকদের মনে উঁকি দেয় ফেলা আসা দুরন্ত শৈশব।

শিশুরা শেষমেষ বাড়ি ফেরে হাত ভর্তি শাপলা আর উচ্ছ্বল হাসি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


জৈন্তাপুরের লাল শাপলা নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে। কাকভোরে উঠেই রওনা না দিলে পরিশ্রম বৃথা!

কখন ও কিভাবে যাবেন জৈন্তাপুর

সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার অদূরেই জৈন্তাপুর। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে শাপলা থাকে। তবে নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ বেড়াতে যান। নিজস্ব গাড়ি বা মাইক্রোতে করে সপরিবারে ঘুরে আসা যাবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে সিলেট যাবেন। এরপর সারাদিনের জন্য সিএনজিচালিত গাড়ি বা অটোরিকশা ভাড়া করে নিতে হবে। ডিঙি নৌকা এবং অটোরিকশায় ঘুরতে দুই হাজার টাকার কম-বেশি খরচ হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর