বাঙ্কারে গভর্নর: ৮ মার্কিন রণতরী ঠেকাতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ

, ফিচার

আশরাফুল ইসলাম | 2023-12-15 19:45:17

মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানী বাহিনী একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ছিল দিশেহারা। যুদ্ধের ময়দানে টিকতে পারে মার্কিন মদদে নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিতে থাকে পাকিস্তানিরা জান্তারা। সময় যতোই গড়াচ্ছিল তারা বুঝে গিয়েছিল পূর্বপাকিস্তানে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র নীলনকশায় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ সংঘটনে দেশিয় আলবদর বাহিনীর যোগসাজশে একদিকে পাকিস্তানি বাহিনী তৎপর থাকলেও চারদিক থেকে চেপে ধরা মিত্র বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল জান্তারা।

একাত্তরের ডিসেম্বরের ১৪ ও ১৫ তারিখ ছিল চূড়ান্তভাবেই ঘটনাবহুল সময়। সেই সময়কার ভারতীয় গণমাধ্যমে ধরা দিয়েছে ওই সময়কার চালচিত্রের বিস্তারিত বিবরণ। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির সহযোগিতায় আমরা জানতে চেষ্টা করেছিলাম ঘটনাবহুল সেই সময়ের সত্যিকারের চিত্রটি কেমন ছিল।

কলকাতার বিখ্যাত দৈনিক যুগান্তর (বর্তমানে অধুনালুপ্ত) সেই সময়ের যুদ্ধের যে সংবাদ প্রকাশ করে তা কেবল চমকপ্রদই নয়, ঐতিহাসিক বিচারেও অনন্য। কেননা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় সেই সময়ের গণমাধ্যমকর্মীদের যে কর্তব্যনিষ্ঠা পত্রিকাটির পরতে পরতে ফুটে উঠেছে তা সত্যিই অনবদ্য।


১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। দৈনিক যুগান্তরের যে সংখ্যাটি বেরোয় তাতে প্রধান শিরোনাম, ‘বগুড়া মুক্ত।। চট্টগ্রাম ও ঢাকার গভর্নরের প্রাসাদ জ্বলছে ঢাকা দখলের লড়াই’। দৈনিকটি সাব হেড করেছিল, ‘খানশাহীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মন্ত্রিসভাসহ ডঃ মালিকের পদত্যাগঃ নিরপেক্ষ এলাকায় আশ্রয়’।

নয়াদিল্লি থেকে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ বার্তা সংস্থা ‘ইউ এন আই’-এর বরাতে দৈনিকটি জানায়, ‘ঢাকায় গভর্নরের ‘বাড়ি’ ও কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে এখন আগুন জ্বলছে। গভর্নর ড. এ মালিক, তাঁর মন্ত্রিপরিষদ ও তাঁর উর্ধ্বতন অসামরিক কর্মচারীরা ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ পদে ইস্তফা দিয়ে নিরপেক্ষ এলাকা ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেলে পালিয়ে গিয়েছেন।’

এই খবরে আরও প্রকাশ, ‘ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে এখন যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশের জনসাধারণের যুগান্তকারী স্বাধীনতা সংগ্রাম এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌছেছে। ঢাকায় পাকিস্তানিদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করে একটি প্রতিনিধিস্থানীয় সরকার গঠনের জন্য ভারতীয় সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকার আজ বিকেলে সদলবলে পদত্যাগ করেছেন এবং ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে নিজেদের সরিয়ে এনেছেন। ঢাকার শহরতলীতে প্রচণ্ড হাতাহাতি লড়াই চলছে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় জওয়ানরা তীব্র বেগে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। একটা শক্তিশালী পাক বাহিনীর মোকাবেলা করে তারা তাদের সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করেছেন। ঢাকা শহরের সেনাবাহিনীর ছাউনীর উপর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে। এদিন রংপুর সেক্টরে শত্রুর সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার বগুড়ার পতনের মধ্য দিয়ে ঐ সেক্টর মোটামুটি শত্রুমুক্ত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’


ঢাকার উপকণ্ঠে বারো জন পদস্থ সেনা কর্তার আত্মসমর্পণের খবর দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছিল, ‘গভীর রাতে ঢাকা সেক্টরের আরও যে খবর এসেছে তাতে দেখা যায়, ভারতীয় জওয়ানরা শুধু জয়দেবপুর, টঙ্গী, কালিগঞ্জ দখল করেই ক্ষান্ত হননি, তাঁরা আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছেন। শহরতলীতে পাক সেনাবাহিনীর পুরো একটা বিগ্রেড আটকে পড়েছে। ঐ বাহিনীর অধ্যক্ষ একজন বিগ্রেডিয়ার ও ময়মনসিং-এর মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটারসহ কমপক্ষে বারোজন জাদরেল পাক সেনাপতি আত্মসমর্পণ করেছেন।’

আল্লা বাঁচাও’বিবরের মধ্যে মালিকের প্রার্থনা

১৪ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘বিমান আক্রমণ হবার পর পরই ডঃ মালিক ও তাঁর মন্ত্রিবর্গ একটি বিবরে (বাঙ্কার) মধ্যে ঢুকে পড়েন। সেই বিবরে রাষ্ট্রসঙ্গের জনৈক কর্মচারী জন কেলীসহ অনেক বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ আশ্রয় নেন।’

গভর্নর মালিক ‘কম্পমান’

ভারতীয় মিগ বিমান থেকে গভর্নর ডা. মালিকের সরকারি বাসভবনে উপর যখন বোমা বর্ষিত হচ্ছিল তখন তিনি ভয়ে কম্পমান। তিনিসহ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন। 

১৪ ডিসেম্বরে বার্তা সংস্থা পিটি আই’র খবর উদ্ধৃত করে ‘লোকসভার বলিষ্ঠ দাবি/মার্কিন সপ্তম নৌবহরের হুমকির কাছে নতিস্বীকার নয়’শীর্ষক প্রতিবেদনে দৈনিকটি জানায়, ‘মার্কিন নৌ-বহরকে বঙ্গপোসাগরের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে ভারতকে যে হুমকি দেখাচ্ছে সে হুমকির কাছে নতি স্বীকার না করতে আজ লোকসভা সরকারের কাছে বলিষ্ঠ আহ্বান জানায়’। এ খবরের পাশেই ‘মালাক্কা প্রণালীতে সপ্তম নৌবহর’ শীর্ষক খবর।

১৪ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে ইউএনআই’র বরাতে প্রকাশিত খবরে যুগান্তর জানায়, ‘‘মার্কিন নৌ-বহরের সাত কি আট খানা জাহাজ সোমবার সিঙ্গাপুর অতিক্রম করে মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করে ভারত মহাসাগরের দিকে এগুচ্ছে। আজ সিঙ্গাপুরের নির্ভরয্যোগ্য সূত্রে এই খবর প্রকাশ পেয়েছে। মালাক্কা প্রণালী প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। যে সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে তা খুবই নির্ভরযোগ্য বলে বর্ণনা করে বলা হয়, জাহাজগুলো উত্তর-পশ্চিম দিকে এগুচ্ছে এবং দুপুরের আগে সিঙ্গাপুর অতিক্রম করে গেছে। খবরে বলা হয়েছে, পারমাণবিকশক্তি চালিত বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপাইজ’ এই মার্কিন নৌবহরের মধ্যে আছে কিনা তা জানা যায় না।

ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে যে, ভিয়েতনামের কোন ঘাঁটি থেকে ‘এন্টারপাইজ’কে বঙ্গপোসাগরের দিকে পাঠানো হয়েছে। উদ্দেশ্যঃ বাংলাদেশে যেসব মার্কিন নাগরিক আটকে পড়েছে, প্রয়োজনসাপেক্ষে তাদের উদ্ধারের জন্য তৈরী থাকা।’’

১৫ ডিসেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের যে খবর যুগান্তরের ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ প্রকাশিত হয় তাতে প্রধান শিরোনাম, ‘বাংলাদেশে যুদ্ধ থামান-নিয়াজি/আত্মসমর্পণ করুন-মানেকশ’

‘আপাততঃ বিমান আক্রমণ স্থগিতঃ আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত নিয়াজীকে সময় দান’

প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী আজ যুদ্ধবিরতির এক প্রস্তাব দেন। এর পরই ভারতীয় স্থলবাহিনীর প্রধান এস এইচ এফ জে মানেকশ’ আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে জেনারেল নিয়াজীকে তাঁর সকল সৈন্যকে ভারতীয় সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিতে বলেছেন।’ 

‘‘জেনারেল মানেকশ’ এই বলে জেনারেল নিয়াজীকে সাবধান করে দিয়েছেন যে, যদি তিনি তাঁর আহ্বানে সাড়া না দেন তাহলে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর পক্ষে আগামীকাল সকাল থেকে আবার প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করা ছাড়া উপায় থাকবে না। জেনারেল মানেকশ’বলেছেন, তাঁর সদিচ্ছার প্রতীক হিসেবে তিনি আজ বিকাল ৫টা থেকে ঢাকার উপর বিমান আক্রমণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্থলবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নরসিংদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে ঢাকার কাছে এসেছেন’’

যুদ্ধ থামাতে ইয়াহিয়ার আকুতি

যুদ্ধ থামাতে পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আকুতির খবর তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে চলে এসেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘‘আজ গভীর রাতে ঢাকা থেকে ভয়েস অব আমেরিকা ঢাকা থেকে প্রাপ্ত একটি সংবাদ উদ্ধৃত করে বলেছে যে, পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গতকাল জেনারেল নিয়াজির নিকট প্রেরিত একটি বাণীতে তাকে ‘যুদ্ধ বন্ধ করার’ পরামর্শ দিয়েছেন।’’

‘‘ঢাকাস্থিত সামরিক কর্তৃপক্ষ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোন আলোচনা চলছে নাÑরাওয়ালপিন্ডির একজন সরকারি মুখপাত্র আজ রাতে এই খবরটি জানান বলে বিবিসি থেকে প্রচার করা হয়েছে। তিনি আবারও আশ্বাস দিয়েছেন যে, পাকিস্তানী সৈন্যদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে এবং জেনিভা চুক্তি অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে’’

‘‘জেনারেল নিয়াজি যে কম্পাঙ্কে তার সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন তাও তিনি তাকে বলে দিয়েছেন। জেনারেল নিয়াজী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ভারতীয় স্থলবাহিনীর অধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ’র কাছে আজ এক পত্র পাঠান বলে এখানে সরকারীভাবে জানান হয়’’

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্বে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় খবর ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মিত্র বাহিনীর অগ্রাভিযানকে ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে মোতায়েনের ঘটনা। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম সংহতি জানিয়ে রাশিয়া ৮ মার্কিন রণতরীর বিপরীতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় ঠেকানোর মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। আমরা দেখব সেই সময়কার গণমাধ্যমের খবরে যেভাবে চিত্রিত হয়েছিল সেই ঘটনাপ্রবাহ।


মার্কিন রণতরীর বিপরীতে ২০ রুশ যুদ্ধ জাহাজ

সিঙ্গাপুর থেকে বার্তা সংস্থা ইউপিআই ১৫ ডিসেম্বর জানায়, ‘আজ এখানে কুটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, পরমাণু শক্তিচালিত মার্কিণ বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপ্রাইজ’ এবং নৌবাহিনীর আরও সাতখানা জাহাজ বঙ্গোপসাগরের অবস্থান করছে।’

জাপানি প্রতিরক্ষা দপ্তরের সূত্র উদ্ধৃত করে কিয়েডো সংবাদ সংস্থার খবর প্রকাশ করে টোকিও থেকে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ‘আজ জানিয়েছে প্রায় ২০টি সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে জমায়েত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্রুজার এবং ডেস্ট্রয়ারও আছে।’

‘কিয়োডো সংবাদ সংবাদে বলা হয়েছে, জাপানি বাণিজ্যিক নৌবহরের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি বিমান আজ সকালে নাগাসাকির দক্ষিণে একটি ৭ হাজার টন ক্ষেপণাস্ত্রী ক্রুজার এবং ৫ হাজার ২০৮ টন ডেস্ট্রয়ার দেখতে পেয়েছে। কিয়েডোর সংবাদে আরও বলা হয়েছে যে, গত এক সপ্তাহ ধরেই সোভিয়েত জাহাজগুলি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

টোকিও থেকে পিটিআই জাপানের প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক সংবাদ উদ্ধৃত করে আরও জানায়, ‘আজ সকালে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি সোভিয়েত জাহাজ ও একটি রণতরী জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত ও কোরিয়া বদ্বীপের মধ্যবর্তী সুশিমা প্রণালী অতিক্রম করেছে। সম্ভবতঃ তাদের গন্তব্যস্থল ভারত মহাসাগর।’

`প্রতিরক্ষা দপ্তরের অফিসাররা জাপানের রিপোর্টারদের বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর সোভিয়েতের একটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেড ও ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন সুশিমা প্রণালী দিয়ে একই দিকে অগ্রসর হয়েছে।  জাপানের সরকারি মহলের অনুমান, সোভিয়েত নৌবহর সম্ভবতঃ বঙ্গোপসাগরের দিকেই চলেছে। জাপানের সরকার মার্কিন নৌবহরের বঙ্গোপসাগর যাত্রা সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি। তবে তাদের বিশ্বাস মার্কিন নৌবহরের দিকেই সোভিয়েত নৌবহর চলেছে।’

সম্পাদকীয় নিবন্ধে নিয়াজিকে তুলোধুনো

জঙ্গিশাহীর অত্যাচার জর্জরিত ঢাকা-হাজার হাজার নরনারীর রক্তলাঞ্ছিত ঢাকা-মানবতার কবরভূমি ঢাকা আজ গণতন্ত্রী শক্তির পদভারে কম্পমান। পাক সেনাপতি লেঃ জেনারেল নিয়াজি দিশেহারা। তাঁর মুখে নেই যুদ্ধের আকাশচুম্বী স্পর্ধা। তিনি চাচ্ছেন অস্ত্র সম্বরণ। স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন জেনারেল মানেকশ’। অস্ত্র সম্বরণের সঙ্গে থাকা চাই আত্মসমর্পণ। নইলে এ ফাঁদে পা দিবে না ভারত। উত্তরের অপেক্ষা করছেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে আরম্ভ হবে প্রচণ্ড আক্রমণ। জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলবে ইসলামাবাদের শক্তিমত্তার পীঠস্থান। কিসের আশায় লড়বেন জেনারেল নিয়াজি? ডা. মালিক ছেড়েছেন গভর্নরগিরি। তাঁর সঙ্গে নিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল। অবরোধ্য পাক সৈন্যরা দিতে পারেনি তাদের তাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। নিজেরাই যেখানে ছত্রভঙ্গ কি করে তারা রক্ষা করবে অপরের নিরাপত্তা। যুদ্ধমুক্ত হোটেল কন্টিনেন্টাল এখন হতভাগ্যদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু সৈন্যদের আশ্রয় কোথায়? সামনে জোয়ান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গীন-আকাশে ভারতীয় জঙ্গী বিমান। আঙুলে গোনা পরমায়ুর ক’টা দিন নিয়ে ধুঁকছিলেন লেঃ জেনারেল নিয়াজি। হয়ত এখনও তাঁর মনে আছে শেষ রক্ষার গোপন সাধ। যদি নিয়াজির আত্মসমর্পণের সুবুদ্ধি আসে, ভালো কথা। নইলে চূড়ান্ত আঘাত অনিবার্য। জওয়ানদের পায়ের নীচে ঢাকা কাঁপছে। যথাসময়ে আত্মসমর্পণ না ঘটলে তার ধুলিশয্যা অনিবার্য। কেউ মুছতে পারবে না দেয়ালের এই স্পষ্ট লিখন। নিয়াজি সাবধান। চাতুরির সময় অতিক্রান্ত। আত্মসমর্পণ কর কিম্বা ধ্বংস হও। সংহার মূর্তি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী। ওদের হুঙ্কারে ডুবে যাবে তোমার শেষ আর্তনাদ।  

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও বার্তা২৪.কম এর পরিকল্পনা সম্পাদক

ঋণস্বীকার: ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর