‘তিলাঘুঘু’র ডাক উপচে পড়ে উপত্যকাময়

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-18 22:36:05

শুকনো ডাল। পাহাড়ি টিলায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। নিঃসঙ্গ, একাকী। কেউ নেই তার আশে-পাশে। পরমুহুর্তেই একটি তিলাঘুঘু ছুটে এলো তার সঙ্গী হতে। সেই শুকনো ডালে পা রাখলো। যে ডালেতে ঘরে একটি প্রাণ ছিল। ছিল সতেজতা। আজ সে ডাল শুকনো, প্রাণহীন।

তবে তিলাঘুঘুর প্রাণময় স্পর্শে ডালটি যেন আরণ্যক স্বস্তি ফিরে পেল।

চা বাগানে চা আবাদের জন্য প্রয়োজন পড়ে ছায়াবৃক্ষের। চা বাগানের একটি সেকশনে (চা এর সুনির্দিষ্ট এলাকা) কিছু দূরে দূরে ছায়াবৃক্ষ রোপন করা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি চা গাছগুলোতে না পড়ে। সরাসরি রোদে বা তীব্র রোদে চা গাছের দুটি পাতার ক্ষতিসাধন হয়। কমে যায় উৎপাদন। সেজন্যই ছায়াবৃক্ষ রোপন করতে হয়।

সেই ছায়াবৃক্ষই চা বাগানের পাখিদের আশ্রয়স্থান। সেটা শুকনো গাছই হোক। কিংবা সবুজ টাটকা, যে গাছই হোক না কেন। পাখিরা তাতেই মহা খুশি!

দেখা গেল, শুকনো এই ছায়াবৃক্ষের ডালে বসে একটি তিলাঘুঘুর ক্রমাণগত ডাক! আহাঃ কী মধুর! সে ডাক ছড়িয়ে পড়েছে সুদূরের। আসলেই তা-ই! ঘুঘু পাখির ডাক কিন্তু বহুদূর থেকে কানে আসে। কী প্রগাঢ় সুন্দর সেই প্রতিধ্বনি! কী ব্যাকুল সেই শব্দরাজি! যা হৃদয়কে আকুল করে তুলে মুহুর্তে। 

‘তিলাঘুঘু’ আমাদের প্রতিবেশী পাখি। আমাদের বাড়ির এদিক-ওদিক তার হঠাৎই বিচরণ। আমরা বুঝতে পারি না। যখন সে কণ্ঠে ডাক তুলে তখনই আমরা বুঝতে পারি - প্রিয় ঘুঘু পাখিটা এখানেই বসে ডাকছে। তখনই তাতে দেখার জন্য আমরা ছুটে আসি। তাকে দেখে দারুণভাবে মুগ্ধ হই।

তার শরীরের উপরের দিকে রয়েছে অজস্র তিল তিল দাগ। কালচে ডানায় সেই লাল তিলা। যে জন্য তার নামকরণ ‘তিলাঘুঘু’। তবে কেউ কেউ ‘পাতিঘুঘু’ও বলে থাকেন। ইংরেজি নাম Western Spotted Dove এবং বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia chinensis, এদের শারীরিক দৈর্য্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। ওর চোখের চারপাশে রয়েছে লাল রঙের বৃত্ত।

এরা নির্জন এলাকার মাটিতে নেমে হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে খায়। মানুষ বা অন্য কানো প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলেই উড়ায় দিয়ে গাছে ডালে বা বৈদ্যুতিক তারে গিয়ে বসে। কখনো একা, কখনো জোড়ায় আবার কখনোবা দলে তাদের দেখা যায়। 

তিলাঘুঘু খুবই নিরীহ স্বভাবের এক শান্তশিষ্ট পাখি। এতোই শান্ত যে তারা যখন বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে তখন সেই ডিম বা তাদের ছানা নেবার জন্য আশপাশের শত্রুপাখিরা হঠাৎ আক্রমণ চালালে তিলাঘুঘু ভয়ে পালায়। ওরা আক্রমণকারী বিরুদ্ধে কখনোই আক্রমণ করতে জানে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর