ঘোড়ার গাড়ির ব্যতিক্রমী ব্যবহার

, ফিচার

মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সাতক্ষীরা | 2023-11-17 13:20:27

একুশ শতকের বিশ্বে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে হচ্ছে হাল চাষ। বর্তমান ট্রাক্টরের যুগে গরুর হাল চোখে পড়ে না বললেই চলে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ তো বিরল ঘটনা।

দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি মালপত্র বহন ও মানুষের বাহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে এলেও কালের পরিক্রমায় তা বিলুপ্তির পথে। সেখানে গরুর বদলে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সুলতানপুর গ্রামের মানুষেরা।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে গেলেই দেখা মেলে ১৩ জন শ্রমিকের (দিনমজুর)। কাঁদপুর দক্ষীণ মাঠ থেকে ১৩ টি ঘোড়ার গাড়িতে করে আমন ধান বহন করে নিয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে।

সুলতানপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কৃষি শ্রমিক রফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম অনেক কম। বাজারে গরুর দাম বেশি। সমিতি থেকে ১লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে আলাউদ্দিন, রহিম,করিম ও তিনিসহ চারজন মিলে ৮ মাস আগে নড়াইল জেলার তুলোরামপুর থেকে ৪টি ঘোড়া কিনে নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে বিঘা প্রতি ৩০০ টাকা হারে ঘোড়া দিয়ে ইরিধানের জমিতে মই দেওয়া শুরু করি। এতে সারাদিন জনপ্রতি ৬ বিঘা জমিতে মই দিয়ে ১৮০০ টাকা আয় করি। তুলোরামপুরে আমরা কয়েকজনকে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে ধান বহন করতে দেখি। এতে উৎসাহিত হয়ে গ্রামে গিয়ে আমরাও ঘোড়া দিয়ে চাষাবাদ শুরু করি। আমার গ্রুপের ১৩ জন কামলা বর্তমানে ১৩ টি ঘোড়ার গাড়ি ও মই দিয়ে চাষ করে ৮ মাসের মধ্যেই সমিতির ঋণ পরিশোধ করে ফেলেছে। সবাই পরিবার নিয়ে সুখে আছে।’

তিনি আরও জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া দ্রুত হাঁটে। ফলে একই সময়ে তিনগুণ বেশি জমিতে মই দেওয়া যায়। একদিনে অনায়াসে ৬ বিঘা মই দেওয়া যায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। ঘোড়ার গাড়িতে আমন ধান বহন করে ১৮০০ টাকা আয় করেন। আবার সারাদিন তিন বিঘায় (বিঘা প্রতি ১হাজার টাকা) হাল চাষ করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

প্রতিদিন ঘোড়ার খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৪০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটছে। জমি চাষে মই মৌসুম শেষে ঘোড়ার গাড়িতে বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করেন বলে জানান তিনি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি অভাব অনটনে মধ্যে দিনযাপন করছিলেন। অর্থের অভাবে তিনি গরু কিনতে পারছিলেন না। বসতভিটা ছাড়া মাঠে ফসলি জমি নাই। সংসারের হাল ধরে রাখতে ঘোড়াটিই তার একমাত্র অবলম্বন।

স্থানীয় কয়েকজন জমির মালিক জানান, গরুর হাল বিলুপ্তি হওয়ার পথে। দুই একজনের থাকলেও তা দিয়ে জমিতে মই দেওয়ার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে, ঘোড়া দিয়ে জমিতে মই দেওয়ার সময় জমির উঁচু-নিচু ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়।

এছাড়া একদিনে অনেক বেশি জমিতে হালচাষ করা যায় বলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয় বলে জানান তিনি।

স্থানীয় চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ডালিম হোসেন বলেন রফিকুল ইসলাম সহ ১২ জন দিনমজুর ঘোড়া দিয়ে বিভিন্ন মালামাল বহন করে অর্থ উপার্জন করে পরিবার নিয়ে সুখে আছে। জমির মালিকদের দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকা লাগে না। এলাকার চাষীদের কাছে তাদের ঘোড়ার ও মইয়ের বেশ চাহিদাও রয়েছে।

কলারোয়া  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাস বলেন, ‘আমরা ইতিহাসে পড়েছি রাজা-বাদশা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে দেশ-শাসন করতেন। কিন্তু আমার উপজেলাতে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ হচ্ছে। ঘোড়া দিয়ে জমিতে মই ও ঘোড়ার গাড়িতে বিভিন্ন ফসল ও মালামাল বহন করে অর্থ আয় করছেন কৃষকরা। এটা একটা ভালো দিক।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর