রংপুরে সোনালী আমনে হাসছে কৃষকের গোলা

, ফিচার

বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-11-16 17:49:08

পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে চারদিক। কৃষকরা হাসিভরা মুখে ক্ষেত থেকে ধান কেটে আঁটির ভার কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে উঠানে। মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ঝাড়াই- মাড়াইয়ে সঙ্গ দিচ্ছেন গৃহিনী ও বাড়ির সদস্যরাও। রংপুরের দেউতি, নব্দীগঞ্জ, মাহিগঞ্জ বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে কৃষকদের মাঝে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে হতাশা ও শুরুর দিকে অনাবৃষ্টির পরেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে বেশ। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মনে আনন্দের জোয়ার বইছে। এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সোনালি প্রান্তরে। এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে যা প্রত্যাশারও অধিক এমনটাই বলছেন কৃষকরা।

রংপুর মাহিগঞ্জ বাজার এলাকার কৃষক, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মতিন, মতিউর রহমান বলেন, এবার শুরুর দিকে বৃষ্টি না হলেও পুরো মৌসুম জুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। তাই পোকার আক্রমণও কম ছিল। বিগত বছরের তুলনায় এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। তাই ফসলের আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলে সব ঋণ মিটিয়ে এবার কিছুটা লাভের আশা করছি।

আমন কাটা-মাড়াই ঘিরে শুধু কৃষক কিংবা পরিবারের সদস্যদের নয়, ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষি শ্রমিকদেরও।


স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুম অনুসারে তাদের কাজের চাহিদা বাড়ে। সারাবছর অন্যান্য কাজ করলেও ধান কাটা-মাড়াইয়ের  অপেক্ষায় থাকি। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা পাই কাটা-মাড়াই ও ধান গোলায় তুলে দেয়ার জন্য। যারা বিঘা চুক্তি নিয়ে ধান কাটছে তারা প্রতি বিঘায় মজুরি নিচ্ছেন তিন হাজার ২'শ থেকে তিন হাজার ৫'শ টাকা । কিছুদিন আগেই কাজ না থাকায় চিন্তিত ছিলেন এসব শ্রমিকরা। ধান কাটা শুরু হওয়ায় হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।

ফসল উৎপাদন নিয়ে কৃষক নেতারা বলছেন, প্রতি বছরেই কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার সাথে সাথে চাষের খরচও বেড়েছে। কৃষকের লোকসান এড়াতে চলতি আমন মৌসুমে ধানের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে লোকসানে পড়বে কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় আমন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, কৃষির ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে থাকলেও কৃষকরা এখনও অবহেলিত। সরকার দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিলেও কৃষকদের কথা কখনও ভাবে নি। কষ্ট করে কৃষকরা যে ফসল ফলান তার ন্যায্য মূল্য তারা পান না। তাই আমরা চাই চলতি আমন মৌসুমে ৩৩ শতাংশ প্রণোদনায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলে পরবর্তী ফসল চাষে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফসলের ন্যায্য দাম পেলে আগামীতে আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে ফসল উৎপাদন করবেন তারা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, এবার সূর্যের আলো ভালো পাওয়ায় ধানের গাছে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হওয়ায় ফলনও বেশি হয়েছে। শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে চাষে কিছুটা সমস্যা হলেও আমন মৌসুমে আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। সবমিলিয়ে কৃষকরা আমনে ভালো ফলন পাওয়ায় খুশি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর