আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়...কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এই কাঁঠাল ছায়ায়। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন রূপসী বাংলার হেমন্তের কার্তিকে।
শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত চলমান। কার্তিকের মাঝামাঝি সময় এখন। শীত শুরুর প্রান্তিক সময় যেন, ভোরে ও সন্ধ্যায় ধানের কচিপাতার ডগায় শিশির বিন্দু জমতে দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। ঋতুর হিসেবে শীতকাল আসতে আরও দুই মাস বাকি। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে। আর সেই স্থানে এসে পূরণ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু, যা হিমালয় থেকে নিয়ে আসছে ঠান্ডা বাতাস। ফলে রাতে শীতের আভাস মিলছে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে সকাল-বিকেলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাতে গায়ে নিতে হচ্ছে অপেক্ষাকৃত মোটা কাপড়।
একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমান-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়। হেমন্তে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়।
নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। লাঠিখেলা, বাউল গান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা নিয়ে বসে গ্রাম্য মেলা। যদিও আজকাল সব ঐতিহ্যই হারাতে বসেছি আমরা। তবুও শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে হেমন্তের উপস্থিতি প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে অন্যরকম এক ভালো লাগার ঋতু।
প্রকৃতির এই রূপ অনেকের কাছেই প্রিয় হওয়ায় হেমন্ত অনেক বাঙালির কাছে প্রিয় ঋতু। এখন থেকে যতই দিন গড়াবে পৌষের দিকে, ততই সাইবেরিয়ান বায়ুপ্রবাহ বাড়বে এ দেশ অভিমুখে। হিমালয় সংলগ্ন এলাকা হিসেবে উত্তরাঞ্চলে এখন থেকেই শীতের আগমণ ঘটছে।
ইতোমধ্যে কুমিল্লায় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অনুভূত হতে শুরু করেছে শীতের পরশ। রোববার (২৯ অক্টোবর) ভোরে বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলছে কুয়াশার। ফসলের মাঠে উঁকি দিচ্ছে নতুন বীজের প্রস্ফুটিত চারা। তাতে শিশির বিন্দু ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু শীতলতা।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে বেশ কুয়াশা পড়ছে। এখন আর রাতে ফুল স্পিডে ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। রাতে কাথা/কম্বল জড়াতে হচ্ছে শরীরে। ভোর পর্যন্ত শীতের পরশ অনুভব হচ্ছে। তবে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীত আসতে দেরি আছে।
গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। বাজারে চোখে পড়ার মতো ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো, শিমসহ ধনিয়া পাতার মতো সবজি। অনেক কৃষক ব্যস্ত শীতের সবজি চাষে।