ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে মাল্টাচাষি সানি

, ফিচার

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) | 2023-10-29 18:20:53

রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস। চাকরি করতেন বেসরকারি একটি কোম্পানিতে। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে মাল্টা চাষ শুরু করেন মাহফুজুল হক সানি (৩১)। শুরুটা কঠিন হলেও এখন তিনি সফল।

মাহফুজুল হক সানির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী গ্রামে। চাকরি ছেড়ে মাল্টার বাগান করছেন শোনে অনেকেই কটূক্তি করতেন। এমনকি পরিবারের লোকজনও আফসোস করতো। কিন্ত সফলতা দেখার পর এখন সবাই খুশি।

২০১৯ সালের এপ্রিলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক বিষয়ে বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পরে জুলাই মাসে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির  নেন।

২০২০ সালের মার্চে করোনা পরিস্থিতিতি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেন সানি। এরপর বাড়িতে থেকে কিছু একটা করার ভাবনা থেকেই ইউটিউব দেখে বারি ১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন এই উদ্যোক্তা।

বাড়ির পাশে পঞ্চাশ শতক জমি মাল্টা চাষের জন্য তৈরি করে শতাধিক চারা রোপণ করেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যায় দ্রæত মাল্টা গাছগুলো বড় হয়ে উঠে। তিন বছরের মাথায় সানির বাগানের মাল্টার ভালো ফলন হয়। অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা বিক্রি শুরু করেন তিনি।

বারুয়ামারি গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চারপাশে সবুজ ধানখেত। মাঝখানে মাল্টার বাগান। সারি সারি মাল্টা গাছের থোকায় থোকায় মাল্টা ঝুলছে। গাছ থেকে পাকা পাকা মাল্টা ছিঁড়ে বিক্রির জন্য সংগ্রহ করছেন সানি। গাছে প্রথম মাল্টা ফল ধরার পর থেকে পরবর্তী আরো ২০ বছর পর্যন্ত মাল্টা উৎপাদন করা যায়।

সানির বাগানের বারি ১ মাল্টা প্রতি কেজি পাইকারি ৮০ টাকা ও খুচরা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারের মাল্টার তুলনায় দাম কম থাকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি পাইকাররা সরাসরি বাগান থেকে মাল্টা কিনে নিয়ে যান।

গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে ফলের দোকানের যে মাল্টা পাওয়া যায় তার দাম ৩০০ টাকা কেজি। ওইগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দেয়া থাকে। আর সানির বাগানের মাল্টা সরাসরি গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে যাই। খেতেও সুস্বাদু দামেও সাশ্রয়ী। ক্ষতিকর কোন কিছু নেই।

মাহফজুল হক সানি বলেন, আমার মা বৃক্ষপ্রেমী মানুষ ছিলেন। মায়ের সাথে থেকে আমারও গাছের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে। তাই চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে কৃষি ও মাল্টার বাগান করেছি। মাত্র ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের প্রথম বছরেই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। আরও মাল্টা গাছে ঝুলছে। আগামী আরো ২০ বছর গাছগুলো থেকে মাল্টা উৎপাদন করতে পারবো। এখন আমার লক্ষ মাল্টা সহ অন্যান্য ফলের চারার নার্সারি করা। 

সানির মামা ফারুক আহাম্মদ বলেন, সানি যখন চাকরি ছেড়ে কৃষি ও মাল্টা বাগান করে তখন অনেকের মত আমিও অবাক হয়েছি। কিন্ত আমার ভাগনে প্রমাণ করেছে পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে সফল হওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, মাল্টাচাষি সানি একজন আদর্শ উদ্যোক্তা। তিনি মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে গ্রামের অন্যান্য যুবকরাও বেকারত্ব ঘুচাতে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, মাল্টাচাষি সানি একজন আদর্শ উদ্যোক্তা। তিনি মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে গ্রামের অন্যান্য যুবকরাও বেকারত্ব ঘুচাতে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর