নগরের বৃক্ষরাজি

, ফিচার

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-09-10 15:44:52

রোববার। ১০ সেপ্টেম্বর। সকাল ৭টা। বিপণি বিতান-নিউমার্কেটের মোড়। চট্টগ্রাম।

আগের রাতের হাল্কা বৃষ্টিতে ঝকঝকে চারপাশ। আবছা নীলের প্রলেপে স্বচ্ছ আকাশ। নগরের এভিনিউের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে একসারি বৃক্ষ।

সকালের তাজা রোদে ঝলমল করছে গাছের পাতাগুলো। সতেজ ও প্রাণবন্ত আবেশে দুলছে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে আসা অফুরন্ত বাতাসে।

দিন যতই বাড়বে, সকাল গড়িয়ে দুপুর হবে, ততই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়বে গাছগুলো। নাগরিক যান্ত্রিকতায় ধুলোবালির আস্তরণে নিস্তেজ হবে বৃক্ষশাখা ও পত্রালি।

শুধু নিউমার্কেট এলাকাই নয়, চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় এখনো ছোপ ছোপ সবুজের দেখা মেলে। নগরায়নের দানবের কবল থেকে বেঁচে কিছু গাছ ছড়িয়ে রয়েছে শহরের নানা স্থানে।

মর্নিংওয়াক করে বাড়ি ফেরার পথে কিছু মানুষ কথা বলেন বার্তা২৪.কম'র সঙ্গে। নগরায়নের তোড়ে সবুজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয়ে উদ্বিগ্ন তারা। তাদের মতে, শহরের রোড ডিভাইডিং পয়েন্ট ও উন্মুক্ত স্থানের গাছগুলোকে পরিচর্যা না করা হলে ধীরে ধীরে কমে যাবে গাছের সংখ্যা। একই সাথে আরও গাছ লাগানোর তাগিদ দিলেন তারা।

'সকালে গাছগুলোকে দেখে প্রাণের স্পন্দন অনুভব করি। কিন্তু বিকেল বা সন্ধ্যায় কালি ও ধূলি-মাখা মৃতবৎ গাছগুলো দেখে বড় কষ্ট হয়', বললেন স্বাস্থ্য উদ্ধারে হাটতে আসা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা স্বপন দাশগুপ্ত। ডিসিহিল পার্কের বেঞ্চে বসা আরেক মর্নিংওয়াকার কথাগুলো শুনে আক্ষেপ করলেন, 'মুখে মুখে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের কথা বললেও বাস্তবে খুব কমই কাজ হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর চট্টগ্রামের নান্দনিকতা, প্রাণ ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা সবাই কমবেশি উদাসীন। '

প্রতিটি প্রাচীন শহরের ঐতিহ্যের গভীরতা ভিন্ন। আইকনিক সৌন্দর্যও বিভিন্ন। এইসব বিচিত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আছে একেকটি শহর। আধুনিকতা প্রতিটি শহরই গ্রহণ করেছে প্রকৃতি, পরিবেশ ও ইতিহাসের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে। ফলে শহরের মূলসুর মোটেও হারিয়ে যায়নি। বরং আধুনিকতার মিশ্রণে শহরের ঐতিহ্য নবরূপ লাভ করেছে।

বাংলাদেশের অতীত-ঐতিহ্য-সমৃদ্ধ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য শহরগুলোকে নগরায়নের ভুল পদক্ষেপের কবল থেকে বাঁচিয়ে প্রকৃতি-বান্ধব রেখে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সচেতন?

এ সম্পর্কিত আরও খবর